অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ১৩ লাখ শিশু  


ঢাকায় মেটাল কারখানায় কাজ করছে শিশু শ্রমিক। ফাইল ফটো- এপি
ঢাকায় মেটাল কারখানায় কাজ করছে শিশু শ্রমিক। ফাইল ফটো- এপি

বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু শ্রমিক রয়েছে যাদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু।

বুধবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বা বিবিএস এর ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার সার্ভে ২০২১ এ এমন তথ্য উঠে এসেছে । জরিপে দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নিয়োজিত রয়েছে এবং তাদের কাজের ধরণ জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ।

এতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে যে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু শ্রমিক রয়েছে তার প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার শিশুর কাজ শিশুশ্রমের আওতায় পড়েছে এবং বাকি শিশুদের কাজ অনুমোদনসাপেক্ষ । জরিপে বলা হয়েছে দেশের মধ্যে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা সব থেকে বেশি ঢাকা বিভাগে যা প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ এবং এর পরেই চট্টগ্রামে রয়েছে ৫.৮ শতাংশ শিশু শ্রমিক। দেশের মধ্যে শিশুশ্রম সব চেয়ে কম বরিশালে ১.৭ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, যে সময় শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা, ঠিক সে সময় এক শ্রেণির শিশু পেটের দায়ে বা অভাবের তাড়নায় শ্রম বিক্রি করে। এটা খুবই বেদনাদায়ক। তিনি বলেন প্রত্যেক শিশুরই ছেলেবেলার অধিকারগুলো প্রাপ্য এবং তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র, সমাজ এবং সকল নাগরিকের দায়িত্ব। শিশুশ্রম বন্ধ হওয়া দরকার বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন এটা সকলকে মনে রাখতে হবে যে শিশু শ্রম নিরসনে সকলকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।

শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ সরকার ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমকে নির্ধারণ করে ২০২৫ সালের মধ্যে সেগুলোকে বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছে। তবে গত জুন মাসে বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশের দরিদ্র ও হত দরিদ্র পরিবারের শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ফিরে যাচ্ছে৷।

সংস্থাটির ওই জরিপে অবশ্য এমন চিত্র উঠে আসলেও সারাদেশে করোনা মহামারির কারণে ঝুঁকি পূর্ণ শিশু শ্রমের সংখ্যা কতটা বেড়েছে তার উল্লেখ নাই ৷ গত জুন মাসে জাতিসংঘও জানিয়েছে করোনা মহামারি ও লক ডাউনের প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্ব ব্যাপীই শিশু শ্রমিকের সংখ্যা গত এক বছরে বেড়েছে প্রায় ১ কোটি।

বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী জিয়া হাবিব ভয়েস অফ অ্যামেরিকার এই সংবাদদাতাকে বলেছেন শিশু শ্রম সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। শিশুদের যখন স্কুলে যাওয়ার কথা এবং মাঠে খেলা ধুলা করার কথা তখন দারিদ্রের কারণেতাদের সেই শিশুকাল ও শৈশবকে নিষ্ঠুর ভাবে কেড়ে নিচ্ছে এই শিশুশ্রম।

অনেক শিশুকেই অতি ঝুঁকি পূর্ণ কাজ যেমন বাসের হেল্পার, কেমিকেল কারখানার শ্রমিক, লেদ মেশিনে কাজ করা এবং দেশের উপকুলের চরাঞ্চলে শুটকি তৈরির কাজ করতে হয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন অনেক সময় এ সকল অতি ঝুঁকিপূর্ণ কাজের কারণে অনেক শিশুই শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছে।

জিয়া হাবিব বলেন এটা সমগ্র জাতি,সমাজ এবং পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক ও দুর্ভাগ্য জনক। তিনি সরকার, জন প্রতিনিধি, বেসরকারি সংগঠন , সমাজসেবী, মানবাধিকার কর্মী এবং সর্বোপরি দেশবাসীকে শিশুদেরকে শিশু শ্রমের হাত থেকে মুক্তি দিতে এক যোগে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন ।

XS
SM
MD
LG