ঈদুল ফিতর পালনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত নিউইয়র্ক প্রবাসি বাংলাদেশীরা

টানা একমাস সিয়াম সাধনার পর প্রিয়জনদেরকে নিয়ে আনন্দে ঈদুল ফিতর পালনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে। বিশেষ করে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীরা ইফতার মাহফিল ঈদমেলার পাশাপাশি ব্যস্ত শেষ মুহুর্তের ঈদের প্রস্তুতিতে। নিউইয়র্কের জ্যাকসনহাইটস, জ্যামাইকা ও এ্যাস্টোরিয়া ঘুরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি নিয়ে লিখেছেন সেলিম হোসেইন:
পুরো রমজান মাস জুড়ে প্রায় প্রতি দিনই, নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীদের, কোনো না কোনো আঞ্চলিক সংগঠনের উদ্যোগে, কোথাও না কোথাও অনুষ্ঠিত হয়েছে ইফতার পার্টি। ছুটির দিন হলে তো কথাই নেই। ছুটির দিনে জ্যাকসনহাইটস, জ্যামাইকা, ব্রুকলীন, ব্রংক্স ও এ্যাস্টোরিয়ায় থাকে দশ বারোটি করে ইফতার পার্টি। আর এসব ইফতারে, স্ত্রী সন্তান পরিবার নিয়ে স্বদেশের আদলেই অংশ নেন প্রবাসীরা। খেজুর সরবত ছোলা মুড়ি পেঁয়াজু কোন কিছুই বাদ যায়না ইফতারের মেনুতে।
ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীদেরকে প্রয়োজনীয় পন্য কেনাকাটার সুবিধার করে দিতে, এ্যাস্টোরিয়ার ক্লাব সনম কতৃপক্ষ, রবিবার ২৮ জুলাই আয়োজন করে ঈদ মেলা। তবে শুধু পোষাক বা অলংকার নয়, মেলার আয়োজক তৌফিক কাদের বললেন এই ঈদে যেনো প্রবাসীরা শাড়ীর সাথে বাড়ীও কিনতে পারেন সেটিও ছিল এই মেলার অন্যতম লক্ষ্য।
স্বস্ত্রীক মেলায় আসেন অভিনেতা জামালউদ্দিন হোসেন। ঈদের প্রস্তুতি কেমন এই প্রশ্নে তিনি বললেন জ্যাকসনহাইটস সহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের ভিড় দেখে ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে কোন একটা উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই।
জামালউদ্দিন হোসেন বললেন, “আমি বুড়ো মানুষ, আমার আর ঈদের প্রস্তুতি কি। ঈদের দিন সকলের সঙ্গে মিলে নামাজ পড়বো এটাই আশা করছি”।
জ্যাকসনহাইটসের ৭৩ ও ৭৪ ষ্ট্রিটের বাংলাদেশী ভারতীয় ও পাকিস্তানী ফ্যাশন হাউজগুলিতে চলছে পরিপূর্ন মাত্রায় ঈদের কেনাকাটা। নারীদের নানা রং এর শাড়ী, সালোয়ার কামিজ, পুরুষদের পাঞ্জাবীর পাশাপাশি তরুণ তরুণীদের জন্য দোকানগুলিতে ওঠানো হয়েছে লেটেষ্ট ফ্যাশনের নানা পোষাক। অনেকই বিভিন্ন ষ্টোর ঘুরে ঘুরে দেখছেন, যাচাই করছেন দাম। সব মিলিয়ে পছন্দ হলেই, কিনে নিচ্ছেন পছন্দের পোষাকটি। কথা হল এমনই কয়েক জনের সঙ্গে। তারা সবাই এবারকার পোষাকের ডিজাইন এবং দামে সন্তুষ্ট।
ঈদ উপলক্ষ্যে এবারকার বিক্রিতেও বেশ সন্তুষ্ট ফ্যাশন হাউজগুলোর মালিকরা। কি ধরনের পোষাক এবং কেমন দামে ক্রেতারা কিনছেন এসব জানালেন ষ্টোর মালিকরা। তারা বললেন শাড়ী পাঞ্জাবী এবং সালোয়ার কামিজের কাটতি বেশী।
ঈদের বেশ কয়েকদিন বাকী থাকতেও ক্রেতাদের ভিড় দেখে তারা আশা করছেন গত বছরের তুলনায় এবার ঈদে ব্যবসা আরো ভালো হবে।
নতুন পোষাক কেনার পাশাপাশি, ঈদের বিশেষ রান্নার প্রস্তুতিও কম নয় নিউইয়র্ক প্রবাসীদের। কোর্মা পোলাও সহ মুখরোচক খাবার তৈরীর জন্য গৃহিনীরা বিভিন্ন গ্রোসারী ঘুরে কিনে নিচ্ছেন সুগন্ধী চাউল, মশলা কিংবা সতেজ মাংস। ভুলছেন না সুস্বাদু সেমাইয়ের কথাও।
ঈদ আসলেই প্রবাসীদের সবচেয়ে পীড়া দেয় দেশে ফেলে আসা প্রিয়জনদের অভাব। কাছে না পাওয়ার বেদনা কাটাতে তাইতো, যার যতোটা সাধ্য এই সময়ে প্রিয়জনদের জন্য অর্থ পাঠান তারা। এবারো ঈদের আগে ভিড় বেড়েছে নিউইয়র্কের অর্থ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে। সাধারন সময় এসব প্রতিষ্ঠানে, যেখানে দৈনিক ৫৬/৬০ টি অর্থ প্রেরণের অনুরোধ থাকতো, প্রতিবারের মতোই ঈদ উপলক্ষ্যে তা বেড়ে দ্বিগুন বা এলাকাভেদে তিনগুন হয়েছে।
চাঁদ দেখার ভিত্তিতে আগষ্টের ৮ বা ৯ তারিখে বৃহস্পতি অথবা শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীরা পালন করবেন এবারকার ঈদুল ফিতর। স্বদেশ ছেড়ে হাজার মাইল দূর এই যুক্তরাষ্ট্রে অনেকেরই অতি নিকটজন নেই। তবে পরিচিতি বাঙ্গালী যারা রয়েছেন তারাই একে অপরের প্রিয়জন, আপনজন। আর সেই প্রিয়জনদের নিয়েই আনন্দে একসঙ্গে পালন করতে চান এবারকার ঈদ উৎসব।

Your browser doesn’t support HTML5

প্রতিবেদনটি শুনুন