মার্টিন লুথার কিং এর অহিংস আন্দোলন কৌশলের ৫০ বছর

সেলিম হোসেন

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সফলতা এবং দেশটিতে বর্ন সমতার যুদ্ধের সাফল্য লক্ষ লক্ষ আফ্রিকান আমেরিকানের কাছে এক অনন্য দলিল। সহিংস না হয়ে সমান অধিকারের দাবীতে সংগ্রাম করার এই কৌশলটিও এক অতুলনীয় বিষয়। শশস্ত্র সংগ্রামের বিকল্প হিসাবে এই কৌশল অবলম্বন করেছিলেন নাগরিক অধিকার নেতা রেভারেন্ড মার্টিন লুথাং কিং। এ নিয়ে ক্রিস সিমকিনসের রিপোর্ট শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন।

Your browser doesn’t support HTML5

mlk-sh

রেভারেন্ড মার্টিন লুথার কিং এর অহিংস আন্দোলনে অনুপ্রানিত হন ভারতের অহিংস আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধীর নীতি থেকে। দক্ষিন জুড়ে কিং প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা তুলে ধরেছেন।

“মিসিসিপি রাজ্যে বর্ণবাদ দূর করার প্রচেষ্টা বারবার রুখে দেয়া হয়”।

কিং এর নেতৃত্বে লক্ষ লক্ষ কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান শান্তিপূর্ন মিছিলে নামেন রাজপথে। একই সঙ্গে তারা নাগরিক অনানুগত্য প্রকাশ করেন। লুথার কিং এর কন্যা রেভারেন্ড বার্নিস কিং বলেন তার বাবা জানতেন অহিংস কৌশল কাজে লাগবে।

“অহিংস আন্দোলনে সকলকে শরীক করতে পারছেন না এমন সমালোচনা হয়েছিল এবং কিছু সহিংসতাও ঘটেছিল”।

এ্যালাবামার বার্মিংহ্যাম হওয়া অহিংস আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করেন শহরেরর মেয়র উইলিয়াম বেল: “সেই সময়ে অনেক মানুষ হত্যা করা হয়, মানুষের বাড়ীতে ও গীর্জায় বোমা মারা হয়; এবং মানুষের মধ্যে এই আতংক সৃষ্টি হয় যে অত্যাচার চলবে”।

১৯৬৫ সালে এ্যালাবামার সেলমায় ভোটাধিকারের দাবীতে একটি মিছিল হয় আর সেখানকার সেই সংঘর্ষকে ইতিহাসে ‘রক্তাক্ত রবিবার’ বলে উল্লেখ করা হয়। কংগ্রেসম্যান জন লুইস সেই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

“তারা আমাদের দিকে তেড়ে আসে, লাঠি দিয়ে আঘাত করে, ঘোড়ায় চড়ে তারা টহল দিতে থাকে, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এক সৈনিক আমার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। আমি ভীষনভাবে আহত হয়েছিলাম এবং মনে হচ্ছিল আমি মারা যেতে পারি”।

মার্টিন লুথার কিং এর ঘনিষ্ঠ এক সহচর এ্যান্ড্রিউ ইয়াং বলেন, “আমরা কৃষ্ণাঙ্গরা যদি গেরিলা যুদ্ধে নামতাম’ যদি আমরা সন্ত্রাস করতাম, হয়ত জয় আমাদের আসত না, তবে হয়ত আমেরিকা টিকে থাকত না”।

বার্মিংহ্যামে স্কুলের বাচ্চাদের ওপর শিকারী কুকুর দিয়ে আক্রমণসহ নানা বর্বরতার চিত্র তখন বিশ্ব গনমাধ্যমে প্রচারিত হয়। সেইসব চিত্র সম্পর্কে বললেন সাউদার্ন পভার্টি ল সেন্টারের এ্যাটর্নী রিচার্ড কোহেন।

“শাষক গোষ্ঠি সংঘাত উস্কে দিয়েছিল; শোষিতেরা নয়; আর সেটই ছিল সেই আন্দোলনে শক্তিশালি বার্তা”।

১৯৬৩ সালের আগষ্ট মাসে হাজার হাজার আফ্রিকান আমেরিকান এবং শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান ওয়াশিংটনের দিকে রওনা হন। সেটি খুব শান্তিপূর্ণ ছিল এবং কাউকে গ্রফতার করা হয়নি।

সেই পদযাত্রার কয়েক সপ্তাহ পর বার্মিংহ্যামে ঘটে সেই দু:খজনক ঘটনা। রবিবারের ক্লাস চলা অবস্থায় ১৬ ষ্ট্রিট ব্যাপ্টষ্ট চার্চের নীচেয় বোমা বিস্ফোরিত হয়। চারজন তরূন ছাত্রী মারা যায়; আহত হয় ২৩ জন। ড. কিং এর জন্যে এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের জন্যেও সেই ঘটনা ছিল ভয়ানক ব্যাপার।

নাগরিক অধিকার কর্মী শার্লী গেভিন ফ্লয়েড বলেন, “একজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষের দিকে তাকাতে আমি ভয় পাই এবং ভাবি পেয়ে যাই"।

অনেক কৃষ্ণাঙ্গ প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেসম্যান ববি রাশ যিনি ১৯৬০ সালে ব্ল্যাক প্যান্থার নামের জঙ্গী গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন।

“আমি ভেবেছিলাম ড. কিং ভীষন নরম এবং দুর্বল এবং তখনো আমি অহিংস আন্দোলনের শক্তি বুঝতে পারিনি। ফলে আমি তার দর্শন অনুসরণ কিরিনি এবং বিকল্প পথ খুঁজি”।

কিছু নেতা নাগরিক অধিকার আন্দোলনকে আমেরিকার দ্বিতীয় নাগরিক যুদ্ধ হিসাবে বর্ননা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরোনো নাগরিক অধিকার সংগঠন The National Association for the Advancement of Colored People এর প্রেসিডেন্ট বেন জিলাস বলেন অহিংস আন্দোলনের প্রচারণা আমেরিকানদের হৃদন মন জয় করতে পেরেছিল।

“আন্দোলনটি চরম পরিনতির দিকে যাচ্ছিল যা ১৯৬৪ সালে এবং ১৯৬৫ সালে নাগরিক অধিকার আইন পাশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়”।

ইতিহাসবিদরা বলেন অহিংস আন্দোলনেরর নানা সমালোচনা স্বত্বেও এর উপসংহার ঘটে আমেরকানদের সম অধিকার এবং স্বাধীনতা নিশ্চত করার মধ্যে দিয়ে।