কিয়েভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা; রাজধানীর দ্বারপ্রান্তে দখলদার সেনা

ইউক্রেনের কিয়েভে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করার পর এক ব্যক্তি একটি অজ্ঞাত বিমানের ধ্বংসাবশেষের চারপাশে হাঁটছেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২।

রাশিয়া শুক্রবার কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং একই সময়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার বাহিনী কিয়েভের আশপাশে লড়াই করেছে। এটি ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণ পরিচালনার দ্বিতীয় দিন। এরই মধ্যে সংঘাতটি বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং পশ্চিমা দেশগুলো তাদের মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে উদ্যত হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায় যে, কিয়েভে “জ্বলন্ত ভগ্নাবশেষ” বিশিষ্ট বিস্ফোরণের ভিডিওটি তারা “যাচাই” করে দেখেছে। দ্য টাইমসও জানিয়েছে যে, ঐ ভিডিওটিতে “আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হয়েছে যে, বিস্ফোরণের আগে কিয়েভের কাছে অন্তত দুইটি ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হচ্ছে।” ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তিরিশ লক্ষ লোক অধ্যুষিত রাজধানীর বাসিন্দাদের ঘরের ভেতরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে এবং শহরটিকে রক্ষা করতে মলোটভ ককটেল নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেছে।

হেভিওয়েট বক্সিং এর সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও কিয়েভের বর্তমান মেয়র, ভিটালি ক্লিচকো বলেন, “শহরটি আত্মরক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। কিছু কিছু মহল্লায় গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। নাশকতাকারীরা ইতোমধ্যেই কিয়েভে ঢুকে পড়েছে।”

রাশিয়ার সামরিক বাহিনী শুক্রবার জানায় যে, তারা কিয়েভের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হসটোমেল বিমানবন্দরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এর ফলে রাজধানীটি দখলে তারা দ্রুত সেনা মোতায়েন করতে পারবে। রাশিয়ার দাবিটি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা না গেলেও, ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ সেখানে প্রচন্ড লড়াইয়ের খবর জানিয়েছে।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্যমিত্র কুলেবা, কিয়েভে “ ভয়াবহ রকেট হামলার” নিন্দা জানিয়েছেন। এর মধ্যে কিছু হামলা বেসামরিক এলাকাতেও চালানো হয়। কিয়েভের প্রধান বিমানবন্দরটির কাছের একটি ১০ তলা অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের জানালাগুলো উড়ে যায়। সেখানে দুই মিটার গভীর একটি গর্ত দেখা যায়, যেটি ভোরের আগে নিক্ষিপ্ত একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তৈরি হয়।

শুক্রবার বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত ডনেটস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাতের পর, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গে ল্যাভরভ সংবাদকর্মীদের বলেন যে, ইউক্রেনের বাহিনী “তাদের প্রতিরোধ বন্ধ করে অস্ত্র সমর্পণ করলে” রাশিয়া ইউক্রেনের সাথে “যে কোন সময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে”।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দফতর ইতোপূর্বে বলেছিল যে, তারা রাশিয়ার সাথে “নিরপেক্ষ অবস্থান” বিষয়ে সম্মত হতে আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে তার বিনিময়ে তারা নিরাপত্তার নিশ্চিয়তা দাবি করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের এই যুদ্ধ বন্ধ করা উচিৎ।” ইউক্রেনের প্রস্তাবের জবাবে ক্রেমলিন শুক্রবার জানায় যে, রাশিয়া ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য বেলারুশে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে।

অপরদিকে, শুক্রবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং নেটোর রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারগুলো একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস বুখারেস্ট নাইন এর নেতাদের সাথে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। নেটোর পূর্ব প্রান্তের সদস্য দেশগুলো নিয়ে বুখারেস্ট নাইন দলটি গঠিত।