রমনার বটমূলে বোমা হামলা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

রাজধানীর রমনা বটমূলে ২০০১ সালে বোমা হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার
ব্যক্তি হলেন- মুফতি শফিকুর রহমান ওরফে আব্দুল করিম ওরফে শফিকুল ইসলাম (৬১)। র‌্যাব সদরদপ্তরের এএসপি (মিডিয়া) ইমরান খান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তি হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য জানিয়েছেন।

মুফতি শফিকুর জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি ১৯৮৭ সালে করাচির ইউসুফ বিন নুরি মাদ্রাসায় পড়তে গেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামি সংগঠন হরকাত-উল-জিহাদের প্রধান মুফতি হান্নানের সংস্পর্শে এসেছিলেন।

পাকিস্তান থেকে পরবর্তীতে আফগানিস্তানে যাওয়ার সময় তিনি জঙ্গি গোষ্ঠীটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে তিনি ‘হরকাত-উল-জিহাদ (বি)’ নামে জঙ্গি সংগঠন গঠন করেন।

১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি জঙ্গি গোষ্ঠীটির প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি দলটির আমির ছিলেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি হরকাত-উল-জিহাদের সূরার সদস্য ছিলেন।

তিনি ২০০১ সালের পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রমনা বটমূলে বোমা হামলা, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ২৭ জানুয়ারি ২০০৫ সালে হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন।

রমনার বটমূলে হামলার পর ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি গোপনে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপর ২০০৮ সাল থেকে নরসিংদীর একটি মাদরাসায় অবস্থান করে আত্মগোপন করেন।নরসিংদীতে থাকাকালীন আব্দুল করিম ছদ্মনাম ব্যবহার করে স্থানীয় একটি মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা বেতনে ইমামের কাজ করতেন। এএসপি ইমরান খান জানান, বিভিন্ন জায়গায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতেন তিনি। "গ্রেপ্তার ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।"

উল্লেখ্য ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এবং বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদও রয়েছেন। এরইমধ্যে তার আমেরিকান ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া র‍্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়ান (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুন্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোন কোন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।