উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন আপাতদৃষ্টিতে একটি পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম “নতুন-ধরনের কৌশলগত স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের” পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করেছেন। রবিবার (১৭ এপ্রিল) দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। পরীক্ষাটি পিয়ংইয়ংয়ের উস্কানিমূলক ক্রমিক উৎক্ষেপণের মধ্যে সর্বশেষতম।
রাষ্ট্রচালিত রোডং সিনমুন সংবাদপত্র সৈকতে দাঁড় করানো একটি অস্থায়ী উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহৃত বাহন থেকে দৃশ্যত স্বল্পপাল্লার একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ছবি প্রকাশ করেছে।
ছবিতে দেখা যায়, উৎক্ষেপণের কাছাকাছি একটি পর্যবেক্ষণ যান থেকে কিম সেটার তদারকি করছিলেন।
সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি "রণক্ষেত্রে দূরপাল্লার গোলন্দাজ ইউনিটগুলোর ফায়ার স্ট্রাইকিং শক্তিকে আমূল বৃদ্ধি এবং ডিপিআরকের (উত্তর কোরিয়ার আনুষ্ঠানিক নাম) কৌশলগত পারমাণবিক কার্যক্রমের কার্যকারিতা জোরদার করতে এবং ফায়ার পাওয়ার টাস্কের বৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ”।
সেই বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে, বিশ্লেষকেরা বলেছেন যে, ক্ষেপণাস্ত্রটি কৌশলগত পারমাণবিক বোমা বহনের উদ্দেশ্যে তৈরি বলে মনে হচ্ছে। গত বছরের একটি বক্তৃতায় কিম কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক আধুনিকীকরণের লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ সে লক্ষ্যগুলোর একটি।
NEW: North Korea announces test of a "new-type tactical guided weapon." Looks like a new short-range ballistic missile. Appears to be of the KN23/KN24-lineage (or perhaps a bit smaller). pic.twitter.com/Re9xt3rcIx
— Ankit Panda (@nktpnd) April 16, 2022
ক্ষেপণাস্ত্রটি দৃশ্যত কেএন-২৩ ও কেএন-২৪-এর অনুরূপ। উত্তর কোরিয়ার এই দুটি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০১৯ সালে প্রথম পরীক্ষা করা হয়েছিল। কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের পারমাণবিক নীতি বিশেষজ্ঞ অঙ্কিত পান্ডা বলেছেন।
রবিবার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে যে, উত্তর কোরিয়ার কাছে দুটি প্রজেক্টাইল (ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা উৎক্ষেপণযান) ছিল, যেগুলো স্থানীয় সময় শনিবার ছয়টার দিকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, প্রজেক্টাইলগুলো প্রায় ২৫ কিলোমিটার উচ্চতায় প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। যা উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক স্বল্পপাল্লার উৎক্ষেপণের চেয়েও অনেক কম ক্ষমতাসম্পন্ন।
উত্তর কোরিয়া আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের একাধিক পরীক্ষা চালিয়েছে, যা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছতে সক্ষম। দেশটি গত মাসে সর্বশেষ এ ধরনের পরীক্ষা চালিয়েছে।
সর্বশেষ উৎক্ষেপণটি কখন হয়েছে তা জানায়নি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীও সাংবাদিকদের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সঠিক সময় উল্লেখ করে সতর্কতা জারি করেনি—যদিও কখনো কখনো সিউল ছোট উৎক্ষেপণের জন্য এই ধরনের সতর্কতা জারি করে না।
উৎক্ষেপণের প্রথম সংকেত আসে রবিবার প্রথমার্ধে। রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ গুয়ামের কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলে, উত্তর কোরিয়া থেকে পরিচালিত “উৎক্ষেপণ” দ্বীপের জন্য হুমকিস্বরুপ এমন “কোনো ইঙ্গিত” নেই।
বিবৃতিটি সন্দেহের উদ্রেক করে, কারণ সেই সময়ে, উত্তর কোরিয়ার উৎক্ষেপণের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
এ বছর এ পর্যন্ত, উত্তর কোরিয়া অন্তত ১৪ বার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে। গত মাসে দেশটি ২০১৭ সালের পর প্রথমবার আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা পরিচালনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে, উত্তর কোরিয়া শিগগিরই আরেকটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে পারে।