মুহিতকে রবিবার সিলেটে দাফন করা হবে—ঢাকায় প্রথম ও দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন

বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত

বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতকে আগামীকাল রবিবার (১ মে) সিলেটে দাফন করা হবে। তার মরদেহ এখন সিলেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এদিকে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শনিবার (৩০ এপ্রিল) বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে সম্পন্ন হয়েছে।

এর আগে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে তার প্রথম নামাজে জানাজা রাজধানী ঢাকার গুলশানের আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর সর্বস্তরের মানুষ যাতে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন সে জন্য দুপুর ১২টায় তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয়।

শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে দীর্ঘ অসুস্থতাজনিত কারণে মুহিত মারা যান বলে ইউএনবিকে জানান তার ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৫ জুলাই আবুল মাল আবদুল মুহিত করোনা আক্রান্ত হন এবং দীর্ঘদিন রোগাক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন। সবশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসে বার্ধক্যজনিত কারণে তাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মুহিতের বর্ণাঢ্য জীবন

১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে আবুল মাল আবদুল মুহিত জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ও সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরীর ১৪ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। পরের বছর একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে অংশ নেন ভাষা আন্দোলনে। ছাত্রজীবনে সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৫৬ সালে যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন দূতাবাসে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সদস্য হলে সেপ্টেম্বরে তিনি নিযুক্ত হন বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের পক্ষে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা গ্রুপের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক।

১৯৮১ সালে সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগের আগে ১৯৭৭-৮১ পর্যন্ত তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮২ সালে সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা দখল করে তাকে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেন। দুই বছরের মাথায় মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। মুক্তিযুদ্ধ, জনপ্রশাসন, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি বই লিখেছেন ৪০টি।

আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১২টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এর ১০টি আওয়ামী লীগ সরকার আমলের।

আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্ত্রী সৈয়দা সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে মেয়ে সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ। বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বাস্তুকলাবিদ ও ছোট ছেলে সামির মুহিত শিক্ষক।