উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দুকধারীরা একটি পোলিও টিকাদান দলের তিন সদস্যকে হত্যা করেছে এবং মঙ্গলবার আরেকজনকে আহত করেছে। দেশটিতে পঙ্গু রোগের নতুন প্রাদুর্ভাবের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও এ ঘটনা ঘটেছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের সীমান্তে একটি অশান্ত জেলা উত্তর ওয়াজিরিস্তানে ঘরে ঘরে টিকা দেওয়ার সময় ভোরে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। এতে একজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং পোলিও দলকে রক্ষাকারী দুই পুলিশ সদস্য মারা যান।
ওয়াইল্ড পোলিও ভাইরাস এই বছর পাকিস্তানে এগারোটি শিশুকে পঙ্গু করে দিয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংখ্যা, এবং জাতীয় নির্মূল কর্মসূচি অনুসারে এ সমস্ত সংক্রমণ ওয়াজিরিস্তান জেলার।
কোনো গোষ্ঠী তাৎক্ষণিকভাবে মঙ্গলবারের ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করেনি।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা, ইউনিসেফ, পোলিও দলের উপর হামলার নিন্দা করেছে এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে বলেছে যে তারা হাজার হাজার বীরের মধ্যে যারা পোলিও নির্মূলে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে।
টুইটারের মাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইউনিসেফ বলেছে যে এই ধরনের আক্রমণের লক্ষ্য "প্রতিটি মেয়ে এবং ছেলেকে পোলিও থেকে রক্ষা করা থেকে বিরত রাখা, পোলিও এমন একটি রোগ যা আজীবন অক্ষমতার কারণ হয়।"
.@UNICEF joins @GovtofPakistan in condemning the attack which reportedly killed a polio worker & security personnel & injured a child in North Waziristan. Those killed were among hundreds of thousands of heroes who work selflessly to #EndPolio. We express our sympathy to families
— UNICEF Pakistan (@UNICEF_Pakistan) June 28, 2022
ইসলামপন্থী বিদ্রোহীরা উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সক্রিয় এবং তারা মনে করে যে এই পোলিও অভিযান হচ্ছে তাদের গোপন আস্তানায় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের সরকারি প্রচেষ্টা। তাই সে এলাকার ইসলামপন্থী বিদ্রোহীরা পোলিও অভিযানের বিরোধিতা করে।
আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানই হচ্ছে একমাত্র দুটি দেশ যেখানে পোলিও শিশুদের পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে চলেছে, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সীমান্তের উভয় দিকেই আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
১৯৯০ দশকের গোড়ার দিকে পোলিও আক্রান্ত হয়ে বছরে প্রায় ২০,০০০ পাকিস্তানি শিশু পঙ্গু হয়ে যেত।
প্রার ১৫ মাস পোলিওমুক্ত থাকার পর পাকিস্তান ২০২২ সালের এপ্রিলের শুরুতে প্রথম পোলিও সংক্রমণের খবর জানায়।
আফগান কর্মকর্তারা ২০২২ সালে পোলিও ভাইরাসের একটি এবং ২০২১ সালে চারটি সংক্রমণের ঘটনা রিপোর্ট করেছেন।
পাকিস্তানি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন যে উত্তর ওয়াজিরিস্তান এবং আশেপাশের জেলাগুলিতে অনেক অভিভাবক জাতীয়ভাবে টিকার প্রচার অভিযানের সময় তাদের বাচ্চাদের পোলিও ড্রপ প্রত্যাখ্যান করে চলেছেন এবং অন্যরা টিকাদাতাদের বারবার ঘরে ঘরে যাওয়াকে হস্তক্ষেপ বলেছে।
তাদের সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে এই গুজব থেকে যে টিকাদান মুসলিম শিশুদের বন্ধ্যাকরণের জন্য পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন একটি ষড়যন্ত্র। এসব মিথ্যা তথ্য, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের বিরুদ্ধে এবং তাদের রক্ষাকারী নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূত্রপাত করেছে। যার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বহু লোকের মৃত্যু হয়েছে এবং নির্মূল প্রচেষ্টাকে ধীর হয়ে গেছে।