আবে-র মরদেহ তার টোকিওর বাসায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য দেশবাসীর শোক

হত্যাকাণ্ডের শিকার জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-র টোকিও-র বাসভবনে শোক জ্ঞাপনের ফুল নিয়ে আসছেন এক কর্মী, ৯ জুলাই ২০২২।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-র মরদেহ বহনকারী একটি গাড়িবহর শনিবার জাপানের রাজধানীতে তার বাসভবনে এসে পৌঁছায়। এদিকে পশ্চিমাঞ্চলের নারা শহর, যেখানে তিনি হত্যার শিকার হন, সেখানকার পুলিশ বলছে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি ছিল।

নারায় শুক্রবারে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে এবং আবে-র বাসভবনে শোকাবহ মানুষ সমবেত হয়। নারায় নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে এক ভাষণ প্রদানের সময়ে, জাপানের দীর্ঘতম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী এই নেতা, এক বিরল রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় আততায়ীর গুলিতে মারা যান। দেশটির রাজনৈতিক মহল হত্যাকাণ্ডটিকে গণতন্ত্রের উপর হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

বেশ কাছে থেকেই আবেকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ ৪১ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায় যে, সন্দেহভাজন ঐ ব্যক্তি বাসায় বানানো একটি বন্দুক ব্যবহার করে। নির্বাচনী প্রচারণার ঐ এলাকায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী শনিবার বলে যে, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি ছিল।

নারা প্রিফেকচারের পুলিশ প্রধান টোমোয়াকি ওনিজুকা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যা ঘটেছে তারপর আমরা অস্বীকার করতে পারি না যে নিরাপত্তা পরিকল্পনায় সমস্যা ছিল।”

তিনি বলেন, “আমি গভীরভাবে দায়ভার অনুভব করছি।” তিনি আরও জানান যে, ঠিক কি ত্রুটি ছিল তা পুলিশ বিশ্লেষণ করবে এবং প্রয়োজনীয় যে কোন পরিবর্তন বাস্তবায়ন করবে।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রবিবারই জাপানের সংসদের উচ্চকক্ষের আসনগুলোর জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

শুক্রবারের ঘটনার ফলে টোকিওতে জরুরিভাবে ফিরে আসার পর, প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা আবারও নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। তিনি আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাগুলো সফর করছেন।

ফুজিয়োশিদা শহরে নির্বাচনী ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল কিশিদার। ঐ ভাষণের স্থানটিতে একটি মেটাল ডিটেক্টর বসানো হয়। এমনিতে অপরাধবিহীন দেশ জাপানের নির্বাচনী অনুষ্ঠানগুলোতে এমন ব্যবস্থা সাধারণত দেখা যায় না। ঐ স্থানে বর্ধিত পুলিশ উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গিয়েছে।

নারা টোকিও-র প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। সেখানে আবে-র ছবির পাশে রাখা এক টেবিলে পুষ্পার্পণ করতে মানুষজন লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।

৫০ বছর বয়সী গৃহিণী নাতসুমি নিওয়া বলেন, “আমি স্তম্ভিত যে নারায় এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে।” তিনি তার ১০ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে শহরতলীর এক রেলস্টেশনে আবে-র হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলের কাছে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

তার ছেলের নাম মাসাকুনি। আবে-র “সুন্দর দেশ” এর স্লোগানে অনুপ্রাণিত হয়ে এই নামটি রাখা হয় বলে নিওয়া জানান। তিনি বলেন, জাপানী ভাষায় “কুনি” অর্থ হল দেশ। আবে রক্ষণশীল নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি “আবেনোমিক্স” হিসেবে পরিচিত নীতিটির পরিকল্পনাকারী। ঐ নীতি জাপানের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছিল।

সোমবার এক সান্ধ্যকালীন প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। আবে’র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার। সেটিতে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা যোগ দিবেন বলে জাপানের গণমাধ্যম জানিয়েছে। উন্মুক্ত কোন স্মরণসভার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।