বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন “বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের সকল বিরূপ প্রভাব দৃশ্যমান। যেমন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি লবণাক্ততা বৃদ্ধি, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, হঠাৎ একদিনে অনেক বৃষ্টি। জলবায়ু পরিবর্তনের এমন ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। অর্থাৎ, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু সম্পর্কিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশে এখন দৃশ্যমান।”
রবিবার (৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে মিশরে অনুষ্ঠেয় ‘কপ-২৭’ সম্মেলনকে সামনে রেখে ‘বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা’ নিয়ে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। এবারের কপ-২৭ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন হাছান মাহমুদ।
বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত দেশগুলো দায়ী বলেও মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, “উন্নত দেশগুলোতে জনপ্রতি গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন অনেক বেশি। ইউরোপে পার ক্যাপিটা পার এরিয়া ১০ টনের বেশি। আমেরিকায় ১৫ টন বা আরও বেশি।”
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখন পার ক্যাপিটা পার এরিয়া চার-পাঁচ টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হচ্ছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশের হার কিছুই না। কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, সেটি আমাদের ওপর অন্য দেশের তূলনায় অনেক বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “গ্ল্যাসিয়েল লেক বলতে বরফ গলে যে লোক তৈরি হয়েছে, সেটাকে বোঝায়। সেখান থেকে উৎপত্তি হওয়া নদীগুলো বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগর দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। তাহলে সেটার যে কী বিরূপ প্রভাব, তা অনুমানের বাইরে। সব মিলিয়ে আমরা এই জলবায়ু পরিবর্তনের অসহায় শিকার। পুরো পৃথিবীই এর শিকার।”
তিনি বলেন,“ এবার আমাদের বক্তব্য থাকবে, দয়া করে যুদ্ধটা বন্ধ করুন। একে অপরকে ধ্বংস করার পরিবর্তে সবাই মিলে পৃথিবীটাকে রক্ষা করি। এটি প্রথম বক্তব্য। দ্বিতীয় বক্তব্য হচ্ছে, আমরা যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের অসহায় শিকার; আমরা বহু বছর থেকে বলে আসছি, সেটির পুনরাবৃত্তি আমরা করবো যে কোনও অজুহাত এখানে দাঁড় করানো যাবে না। আমাদের প্রতিশ্রুত সাহায্য করতে হবে।”
“প্যারিস চুক্তির আলোকে যা হওয়ার কথা ছিল, তা এখনো হয়নি। যেমন, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে যে পরিমাণ অর্থ জমা পড়ার কথা ছিল সেটি জমেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমিয়ে আনতে সেই অর্থ সমবণ্টন-এর কথা ছিল, কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি যেভাবে সমাধান করার কথা ছিল, সেভাবে হচ্ছে না; উল্লেখ করেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী।
তিনি জানান, “আমাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে আমরা চেষ্টা করবো, আমরা যারা পৃথিবীতে শান্তি চাই, শান্তি স্থাপিত হোক। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে পৃথিবী নানা অশান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই যে আড়াই বছর ধরে মহামারী। এরমধ্যে আমরা যুদ্ধ করছি। আমাদের বিবেক-বুদ্ধি কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরবো কপ-২৭ এ।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “মহামারীর মধ্যে পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবস্থা নড়বড়ে হয়েছে। কিন্তু আমরা ব্যস্ত নিষেধাজ্ঞা পাল্টা-নিষেধাজ্ঞায়। এতে ডলার শক্তিশালী হয়েছে, পাশাপাশি রুবলও। কিন্তু আমরা যারা যুদ্ধের বাইরে আছি, আমরা প্রচণ্ড অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।”
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “যেখানে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা দরকার; তা বাদ দিয়ে আমরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছি। শুধু মহামারী নয়, এ বছর বিভিন্ন দেশে বন্যা, খরা ও দাবানল হয়েছে। ইউরোপ, তুর্কি, গ্রিস, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি মাঝে মাঝে সাইবেরিয়ায়। এই যে পৃথিবীতে বদলে যাচ্ছে। পৃথিবী যে একটি প্রাকৃতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এসব ঘটনার তারই বহিঃপ্রকাশ। এমন অবস্থা থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা দরকার।”