যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিযোগিতা কোটি কোটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে: কিশোর মাহবুবনী

লেখক, কূটনীতিক ও ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ কিশোর মাহবুবনী

আগামী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মাত্রা এমন পর্যায়ে বৃদ্ধি পাবে, যা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে। বিশেষত, বাংলাদেশের মতো দেশগুলো এর সম্ভাব্য সব ধরনের প্রভাব মোকাবেলায় বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। একথা বলেছেন লেখক, কূটনীতিক ও ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ কিশোর মাহবুবনী।

রবিবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে কসমস ডায়ালগের সর্বশেষ পর্বের মূল বক্তব্যে একথা বলেন কিশোর মাহবুবনী। সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ স্কুল অফ পাবলিক পলিসির সাবেক ডিন মাহবুবনী বলেছেন, “আপনারা যেখানেই থাকুন না কেন, আপনারা যাই করেন না কেন, আপনাদের জীবন এই ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার দ্বারা প্রভাবিত বা ব্যাহত হবে। আমি আপনাদের নিশ্চিত করে তা বলতে পারি।”

কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত, ইমার্জিং এশিয়ান নেশনস ইন গ্লোবাল জিওপলিটিক্স: ইমপ্লিকেশনস ফর বাংলাদেশ’- শীর্ষক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।

মাহবুবনী বলেছেন যে বিশ্ব একটি কঠিন ও জটিল পরিস্থিতিতে রয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতাকে ইতিহাসের শুরু থেকে সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ, চীন ওযুক্তরাষ্ট্র উভয়ের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রাখতে চায় বলে অসুবিধা হবে এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।”

আসিয়ানের মতো কার্যকর কোনো আঞ্চলিক সংস্থার অনুপস্থিতির কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা কঠিন বলে উল্লেখ করেন তিনি। মাহবুবনী মনে করেন, সার্ক অকার্যকর প্রমাণিত হওয়ায়, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতার ফল বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেলবে।

সংলাপে, ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, “বিশ্ব একটি সিরিজ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে এবং এই তালিকাটি দীর্ঘ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো; অভ্যন্তরীণ ও এক জাতির সঙ্গে আরেক জাতির দ্বন্দ্ব, মহামারী ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি, জলবায়ুর কারণে সৃষ্ট জরুরি অবস্থা, ঋণের সঙ্কট, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়, সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন এবং ক্রমান্বয়ে বৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়া।”

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী নিয়মতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বৈশ্বিক নিয়ম ও মানদণ্ডের ওপর মারাত্মকভাবে চাপ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে, কয়েক দশকের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তৈরি হওয়া সামাজিক শর্ত ও চুক্তি ভেঙে যাচ্ছে।”

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জানতে চান, চীন ও ভারতকে কাছাকাছি আনতে বাংলাদেশের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ আছে কি-না। এর প্রতিক্রিয়ায় কিশোর মাহবুবনী বলেন, “আমি অবশ্যই বলব এটি একটি খুব চ্যালেঞ্জিং প্রশ্ন। সত্যি বলতে এটি বাংলাদেশের জন্য খুবই বিপজ্জনক হবে।” তিনি বলেন, “ভারত বাংলাদেশের একটি বড় প্রতিবেশি এবং বাংলাদেশের অবশ্যই বড় প্রতিবেশির সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ রাখতে হবে।”