যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ সুসম্পর্ক বজায় রাখছে, বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং: পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ তার ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বৈশ্বিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন, উভয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে, যদিও এটি একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার কীভাবে সম্পর্ক বজায় রাখছে তা জানতে চাইলে ড.মোমেন এ কথা বলেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। তাদের (যুক্তরাষ্ট্র ও চীন) নিজস্ব সমস্যা থাকতে পারে। এটা তাদের মাথাব্যথা, আমাদের নয়। আমরা উভয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।” আব্দুল মোমেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উক্তি, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’-উল্লেখ করেন। মোমেন বলেন, “আমরা এই নীতিতে বিশ্বাস করি।”

আব্দুল মোমেন ভোরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির সময়, চীনের নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গ্যাংকে স্বাগত জানান। আর, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিনিয়র ডিরেক্টর রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার বাংলাদেশে তার চার দিনের সফর শেষ করেন।

অন্যদিকে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিনিময় করতে বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছেন ভাইস মিনিস্টার চেন ঝাউয়ের নেতৃত্বে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদল ১১ জানুয়ারি ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী সেক্রেটারি অফ স্টেট হিসেবে নিযুক্ত হওয়া ডোনাল্ড লু সম্ভবত ১৫ জানুয়ারি তার বাংলাদেশ সফর শুরু করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা লাউবাচারের সফর কালে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করেছে কিনা জানতে চাইলে, ড. মোমেন বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচন এক বছর পর অনুষ্ঠিত হবে এবং গত ১৪ বছরে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের দেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ।”


এক চীন নীতিতে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, “আমরা এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাস করি। এটা আমাদের মূলনীতি। এটা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি। আমাদের সবাইকে নিয়েই চলতে হয়। আমরা চীনকে পর্যায়ক্রমে সমর্থন দেব।” পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) ভোরে ঢাকায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গ্যাংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

আব্দুল মোমেন জানান, বাংলাদেশকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ায়, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। আর, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে ছিন গ্যাংকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘদিন পার হলেও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না।”

এ বিষয়ে ঘোষণা দিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন আব্দুল মোমেন। পদ্মা সেতুসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে চীনের সহযোগিতার বিষয়ও আলোচনায় স্থান পায়। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় অর্থ সহায়তার সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু চুক্তি সই হয়েছিল। সবগুলো চুক্তি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। সেই বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন আব্দুল মোমেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গ্যাং। জবাবে আব্দুল মোমেন তাকে আরও বেশি সময়ের জন্য বাংলাদেশ সফরের প্রস্তাব দেন।

বেইজিং থেকে আফ্রিকায় সফরে যাওয়ার পথে, উড়োজাহাজের জ্বালানি নিতে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় এক ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সোমবার (৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টা ৫৮মিনিটে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তারা বৈঠক করেন। রাত ২টা ৫০ মিনিটের দিকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইট ঢাকা ছেড়ে যায়।