নারী শিক্ষার উপর আরোপিত 'অস্থায়ী' নিষেধাজ্ঞার নিস্পত্তি করতে কাজ চলছে: তালিবান

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি নারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢুকতে না দেয়ায় তারা বাইরে অপেক্ষা করছে। ২১ ডিসেম্বর, ২০২২।

আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালিবান, বৃহস্পতিবার এমন আভাস দিয়েছে, তারা নারী শিক্ষার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে পারে। তারা বলেছে, "এই অস্থায়ী পদক্ষেপ" সমাধানের জন্য কাজ চলছে।

মেয়েদের শিক্ষা এবং আফগান নারী সাহায্য কর্মীদের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির একটি জোটের আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় এই বিবৃতিটি দেয়া হলো।

সৌদি আরবে অবস্থিত ৫৭-সদস্যের অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন, বা ওআইসি, নারীদের উপর তালিবান নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করার জন্য বুধবার তাদের নির্বাহী কমিটির এক "জরুরি বৈঠক" করেছে।

ওআইসি-এর সভা-পরবর্তী এক ঘোষণায় এই নিষেধাজ্ঞাকে ইসলামিক আইন এবং নবী মুহাম্মদের "পদ্ধতি" লঙ্ঘন হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। নারীদের শিক্ষা ও কাজ থেকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার বিষয়ে ওআইসির পক্ষ থেকে তালিবানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওআইসি "আফগানিস্তানে নারী শিক্ষা স্থগিত করা এবং সমস্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা [এনজিও]কে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নারী কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে চরম হতাশা ব্যক্ত করেছে।"

এর প্রতিক্রিয়ায়, তালিবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বৃহস্পতিবার বলেন, তার সরকার ওআইসি’র বৈঠক এবং এর ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। কিন্তু গণমাধ্যমে জারি করা এক বিবৃতিতে মুজাহিদ আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ওআইসি বুধবার বলেছে, তালিবান নেতৃত্বের কাছে সরাসরি তাদের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আফগানিস্তানের জন্য নিযুক্ত বিশেষ দূতকে কাবুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে নারীদের উপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তালিবান। তারা কিশোরী মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে এবং অনেক নারীকে কাজ করা থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।

গত মাসে, ইসলামপন্থী শাসকরা হঠাৎ করে মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং আফগান নারীদের এনজিওতে কাজ করতে নিষেধ করে। তালিবান কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ইসলামিক কায়দায় হিজাব পরছে না, এবং অন্যান্য সরকারী শরীয়াহ নিয়ম মানছে না।

এনজিওর প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে, বড় বড় আন্তর্জাতিক মানবিক গোষ্ঠীগুলিকে আফগানিস্তানে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য করেছে। তারা বলছে, নারী কর্মীদের ছাড়া তাদের পক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল, বা এনআরসি, আফগানিস্তানে তাদের কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে। এই সপ্তাহের শুরুতে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, নারী কর্মীদের উপর নিষেধাজ্ঞা ৬০ লক্ষ আফগানকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

এনআরসি মহাসচিব জ্যান এগল্যান্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, এনজিওগুলিতে নারী কর্মীদের প্রতি অব্যাহত নিষেধাজ্ঞা, দেশটির ১ কোটি ৩৫ লাখ মানুষকে নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ, এবং ১ কোটি ৪১ লাখ মানুষকে সুরক্ষা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করবে।

প্রধানত মানবাধিকারের উদ্বেগ এবং আফগান নারীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও বিদেশী সরকার তালিবান প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিক বৈধতা দেয়নি। তবে, তালিবান বারবার তাদের নীতির প্রতি সাফাই গেয়ে, জোর দিয়ে বলেছে, তারা আফগানিস্তানকে স্থানীয় সংস্কৃতি এবং শরিয়ার সাথে সঙ্গতি রেখে কঠোরভাবে শাসন করছে।