কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে দুই দিনের সফর শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য দেশটির পক্ষ থেকে ৭৯ মিলিয়ন ক্রোনা বা ৭৬ লাখ ইউএস ডলার অনুদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
এই অনুদানের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রান্নার জন্য পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, কক্সবাজারের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের উন্নয়ন এবং শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশিদের দক্ষতায় উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে।
নিরাপদ জ্বালানি ও শক্তির জন্য এ সকল কর্মকাণ্ড জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) যৌথ কার্যক্রম ‘সেফ অ্যাক্সেস টু ফুয়েল অ্যান্ড এনার্জি প্লাস, ফেইজ ২’ (সেফ+২) এর আওতাধীন।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)।
রাষ্ট্রদূত লিন্ডে বলেন, “কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দানকারী স্থানীয় বাংলাদেশিদের জীবনে সেফ+২ প্রোগ্রামের ইতিবাচক প্রভাব দেখে আমি মুগ্ধ। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমনের একটি প্রভাব পড়েছিল কক্সবাজারের বনভূমির একটি বড় অংশের ওপর। সেফ+২ এর মাধ্যমে বিস্ময়করভাবে শরণার্থী শিবিরগুলোর আশেপাশের জায়গাগুলোতে সবুজায়ন ও বনায়ন পুনরায় হচ্ছে”।
তিনি আরও বলেন, “এই যে শরণার্থীরা এখন পরিচ্ছন্ন জ্বালানির মাধ্যমে রান্না করছে, এর মাধ্যমে বনভূমি এবং তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশিরা দক্ষতা উন্নয়ন ও জীবিকার কাজে জড়িত হচ্ছে। যা অসাধারণ একটি অর্জন। এখানে অবদান রাখতে পেরে আমরা আনন্দিত”।
প্রকল্পের আহ্বায়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রতিনিধি ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও বলেন, “সুইডেনের সরকার ও এর জনগণের এই অনুদানের মাধ্যমে আমরা এক লাখ ৯০ হাজার শরণার্থী পরিবারকে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) দিতে পারব। এই পরিচ্ছন্ন জ্বালানি শরণার্থীদের সুস্থতা ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে। কেননা, এর মাধ্যমে নিশ্বাসের সঙ্গে কম ধোঁয়া ঢোকে এবং এটি বনে গিয়ে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও অন্য সুরক্ষা ঝুঁকি রোধ করে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের একটি সফল পুনর্বাসন হবে এবং টেকসইভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমবে”।
এলপিজি ও উন্নত জ্বালানিবান্ধব রান্নার সরঞ্জাম বিতরণের মাধ্যমে গাছের কাঠের ব্যবহার ও এর সঙ্গে গাছ কাটার পরিমাণ কমানো যায়। এই কার্যক্রমের প্রথম ধাপের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৪ লাখ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
পুরো প্রক্রিয়াটি আরও কার্যকরী হয় একই সময়ে গাছ লাগানো, পুনরায় বনায়ন এবং ঝিরি ও পানি নিষ্কাশনের বিভিন্ন প্রাকৃতিক ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে। এই যৌথ কার্যক্রমে পরিবেশের উন্নয়ন ও কৃষি বিষয়ক দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ঝুঁকিতে থাকা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগণকে সাহায্য করবে।
২০১৯ সালে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএমের নেতৃত্বে শুরু হওয়া সেফ+ কার্যক্রমটিকে প্রথম থেকেই সুইডেন সহায়তা দিয়ে এসেছে। প্রথম ধাপের সফলতা ও অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে ২০২২ সালের জুলাইতে এর দ্বিতীয় ধাপ সেফ+২ শুরু হয়। এই কার্যক্রমের দ্বিতীয় ধাপকে বর্তমানে সহায়তা দিচ্ছে সুইডেন ও কানাডা সরকার।
প্রায় ৬ বছর আগে মিয়ানমারে সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী হতে বাধ্য হয়েছিল। বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজার এলাকায় ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে এবং আরও ৩০ হাজার শরণার্থী বাস করছে ভাসানচরে।