বাংলাদেশের ফেনী জেলায় বন্ধ হয়ে গেলো সব সিনেমা হল

বাংলাদেশের ফেনী জেলায় বন্ধ হয়ে গেল সব সিনেমা হল। এক সময় ফেনী শহর ও দাগনভূঞায় ৬টা সিনেমা হল ছিল। এখন একটিরও অস্তিত্ব নেই। বেশ কয়েক বছর ধরে দর্শক সংখ্যা কমে যাওয়ায় সর্বশেষ গত বুধবার (১৫ ফেব্রয়ারি) জেলা শহরটির স্টেশন রোডের দুলাল সিনেমা হলটি ভাঙা শুরু হয়েছে। সেখানে বহুতল বিপণি বিতান নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ফেনী শহরে এক সময় দুলাল সিনেমা হল, সুরত মহল, বিলাসী সিনেমা হল ও কানন সিনেমা হল নামে চারটি সিনেমা হল ছিল। ফুলগাজীতে বিউটি সিনেমা হল ও দাগনভূঞায় ঝর্ণা সিনেমা হল নামে আরও দু’টি সিনেমা হল ছিল। একসময় এসব হলে ছবি দেখার জন্য হাজার হাজার দর্শক ভিড় করতেন। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পরিবার নিয়ে আসতেন অনেকে।

১৯৫২ সালে ক্রীড়া সংগঠক খায়রুল এছাক মিয়া শহরের রেলস্টেশন সড়কে 'দুলাল' সিনেমা হল চালু করেন। বছর খানেক পর শহরের জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন 'সুরত' চালু করেন আফজালুর রহমান। ১৯৭৮ সালের দিকে আবুল কালাম আজাদ পেয়ারা ও মমতাজুল হক ভূঞার হাত ধরে মাস্টারপাড়া মোড়ে চালু হয় 'কানন' সিনেমা হল। ১৯৮০ সালের পরবর্তী সময়ে নুর মিয়া শহরের একাডেমি রোডে চালু করেন 'বিলাসী' নামের আরও একটি সিনেমা হল।

২০০৩ সালে আফজালুর রহমানের মৃত্যুর পর তার ছেলে বাচ্চু মিয়া সুরত হলের দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে সিনেমা হলটি ভেঙ্গে 'ফেনী সুপার মার্কেট' গড়ে তোলা হয়। বিলাসী সিনেমা হলের প্রতিষ্ঠাতা নুর মিয়া মারা যাওয়ার পর তার ছেলেরা স্থানীয় কমিশনার ওমর ফারুকের কাছে ভাড়া দেন। তবে দর্শক সঙ্কটের কারণে লোকসানের মুখে ২০০২ সালে হলটি ছেড়ে দেন তিনি। এরপর থেকে সেটিও বন্ধ।

করোনার আগ পর্যন্ত চালু ছিলো কানন সিনেমা হল। গত কয়েক বছর লোকসান হলেও কর্মচারীদের কথা মাথায় রেখে মালিকপক্ষ এটি চালু রাখে। করোনায় হল বন্ধ হলে তারা অন্য পেশায় চলে যান। সম্প্রতি মালিক পক্ষ হলটি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন।

পরিবেশ, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্ন আসন ব্যবস্থার কারণে সুরত ও দুলাল সিনেমা হল দর্শকদের পছন্দের তালিকায় ছিল। এসব হলে প্রতি শো'তে ৭০০ থেকে ৮০০ টিকিট বিক্রি হতো। অন্য সিনেমা হলগুলোতে দর্শক সমাগম কিছুটা কম হতো। তবে সেগুলোতেও প্রতি শো'তে ৪০০ থেকে ৬০০ দর্শকের সমাগম ঘটতো। শহরের চারটি সিনেমা হলে প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার দর্শক বিনোদন সুবিধা পেতেন।