প্রযুক্তির পাশাপাশি শ্রমঘন শিল্পে মনোনিবেশ করবে সরকার—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে শ্রমঘন শিল্পের সঙ্গে মিলিয়ে দেশে আরও বেশিসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চায়।

শেখ হাসিনা বলেন, “প্রযুক্তি প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হচ্ছে, এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব দরজায় কড়া নাড়ছে। হয়তো আমাদের জনবল কম লাগবে, কিন্তু আমাদের প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন”।

শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিজ্ঞানী, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে 'বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ', 'জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ' এবং বিশেষ গবেষণা অনুদানের চেক বিতরণকালে এ কথা বলেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

শেখ হাসিনা বলেন, “সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে পুরোপুরি গ্রহণ করতে চায় না। কিন্তু আমরা পুরোপুরি সেই দিকে যেতে চাই না। আমরা শ্রমঘন শিল্পও স্থাপন করতে চাই। কারণ বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সুতরাং এই দুটির সঙ্গে মিলিয়ে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এটি অবশ্যই আপনাদের মনে রাখতে হবে”।

শেখ হাসিনা গবেষকদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের কাজ করার জন্য অনুরোধ করেন এবং তিনি সময়ে সময়ে এই গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে অবহিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণায় বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে নতুন বৈশ্বিক প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।



শেখ হাসিনা এলডিসি ৫ সম্মেলনে যোগ দেবেন

আগামী ৫ থেকে ৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জাতিসংঘের পঞ্চম সম্মেলনে (এলডিসি ৫) অংশ নিতে শেখ হাসিনা ৪ মার্চ (শনিবার) কাতারের দোহার উদ্দেশে রওনা হবেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন প্রধানমন্ত্রীর কাতারের দোহায় অবস্থানকালীন সময়সূচি জানান।

শেখ হাসিনা একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন এবং এলডিসি ৫ সম্মেলনে তাঁর অংশগ্রহণ ছাড়াও কাতারের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

জ্বালানি খাতে সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো আলোচনায় আসবে।

৫ মার্চ শেখ হাসিনা বিশেষ অতিথি হিসেবে পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধনী সভায় ভাষণ দেবেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি এবং এলডিসি গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যানও পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে বক্তব্য দেবেন।

শেখ হাসিনা ‘২০২১ সালের গ্র্যাজুয়েটিং কোহর্টের জন্য টেকসই এবং মসৃণ রূপান্তর’ শিরোনামের সাইডলাইনে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন।

৬ মার্চ তিনি ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়াল অব ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি বিজনেস সামিটে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন।

৭ মার্চ তিনি ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক একীকরণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের সংলাপে যোগ দেবেন।

এ ছাড়াও তিনি বিশেষ অতিথি হিসেবে ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর স্মুথ অ্যান্ড সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন: মার্চিং টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

তিনি কাতারের আমির ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

শেখ হাসিনা কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে কাতার সফর করবেন।

এ সফরে তাঁর সঙ্গে থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি।

এলডিসি ৫ হলো এমন জায়গায় টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার সুযোগ যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহায়তা। যা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে, তাদের সমৃদ্ধির পথে অগ্রগতি করতে সাহায্য করে৷

দোহায় এলডিসি ৫ সম্মেলনের পাঁচ দিনেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব নেতারা বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, সংসদ সদস্য এবং তরুণদের সঙ্গে নতুন ধারণা এগিয়ে নিতে, সহযোগিতার নতুন অঙ্গীকার উত্থাপন করতে এবং দোহা কর্মসূচির মাধ্যমে সম্মত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে উৎসাহিত করতে একত্রিত হবেন।

সম্মেলনে, এটি প্রত্যাশিত যে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ এবং বাস্তবে বাস্তবায়নযোগ্য ঘোষণা করা হবে যা এলডিসি-নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে।

সম্মেলনে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন, সমান্তরাল উচ্চ-স্তরের থিম্যাটিক গোলটেবিল, এবং ডিপিওএর বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক অগ্রাধিকারের ওপর সমান্তরাল এবং পার্শ্ব ইভেন্টগুলোর একটি সিরিজ থাকবে।

সম্মেলনের আগের দিন মালাউইর প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে এলডিসি গ্রুপের একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

গ্রুপ অব এলডিসি প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীতে একটি স্মরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধনী অধিবেশনের পরে অনুষ্ঠিত হবে।

সম্মেলনের প্রান্তে বেসরকারি খাত, সিএসও, যুবক, সংসদ সদস্য এবং দক্ষিণ-দক্ষিণ ট্র্যাকগুলোর জন্য উৎসর্গীকৃত অনুষ্ঠানগুলোও থাকবে।

বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সময়ের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

জাতিসংঘের মতে, এই ৪৬টি দেশ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন থেকে উপকৃত হবে তা নিশ্চিত করতে অবশিষ্ট বছরগুলোতে একটি নতুন বৈশ্বিক অংশীদারির সূচনা করতে হবে।

শেখ হাসিনার আগামী ৮ মার্চ ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।