তাপদাহ গ্রাস করেছে সমগ্র বাংলাদেশ। কোথাও কোথাও চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, খুব শিগগির বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায়, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। এদিকে দিনের (১৫ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস চুয়াডাঙ্গায়। তীব্র তাপপ্রবাহ অঞ্চলে অতিপ্রয়োজন ছাড়া জনগণকে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বুলেটিনে বলা হয়, খুলনা বিভাগ, ঢাকা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা ও পটুয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের বাকি অংশে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বুলেটিনে আরো বলা হয় যে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ
তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসী। শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। টানা ১৪ দিন ধরে দাবদাহ চলছে এই জেলায়। মৃদু, মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ শেষে এবার অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে এ জেলায়।
তাপদাহে আমের গুটি, ধানের শিষ ঝরে যাচ্ছে। সবজি খেত সহ সকল প্রকার চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে শিশু রোগী সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, “আজ (১৫ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।” তিনি আরো বলেন, “সহজে দেখা মিলছেনা বৃষ্টির। এবারের গরমে ভিন্নমাত্রা রয়েছে। বাতাসের আদ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তাই তাপদাহের মধ্যে ঠোট শুকিয়ে ও ফেটে যাচ্ছে।”
সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র রোদ তাপ ছড়াচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। বিশেষ করে দুপুরের পর আগুনঝরা রোদে ঘরের বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। টানা তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড গরমের সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষেরা অস্বস্তিতে পড়েছেন।
আগামী তিন-চার দিন তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীব-বৈচিত্র্যের ওপর।
তাপমাত্রা বাড়ায় শিশু ও বয়স্করা দুর্ভোগে পড়ছেন। সহনীয় গরমে গ্রামাঞ্চল কিংবা শহরে শিশু, বয়স্কদের জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। তাপের কারণে নানা বয়সীদের দেখা দিয়েছে চর্মরোগ। একটানা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হিট স্ট্রোক, হৃদরোগ, ডায়রিয়া, শিশুর নিউমোনিয়াসহ গরমজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রতিদিনই ৭০-৮০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে।। সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফাতেহ আকরাম জানান, “হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশিরভাগ গরম জনিত রোগে আক্রান্ত।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তীব্র তাপদাহের কারণে বোরো ধান, আমের গুটি ঝরে শুকিয়ে যাচ্ছে। আম গাছে পানি স্প্রে এবং বোরো ধান সহ সব ধরনের সবজি খেতে প্রতিদিনই সেচ দিতে এবং সেচের পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি কর্মকর্তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক করণীয় বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার সব স্থানে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে। তারা যেন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে না আসেন।