রানা প্লাজা - অতঃপর

Your browser doesn’t support HTML5

২০১৩ সালে শিশু শ্রমিক ইয়ানুর আক্তার কাজ করছিলেন সাভারের রানা প্লাজা ভবনের ছয় তলার একটি পোশাক কারখানায়। তার মা মেশিনে কাজ করতেন, আর ইয়ানুর ছিল হেল্পার। ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে পড়লে বাম পা থেতলে যায় ইয়ানুরের, আর তার মা প্রাণ হারান। স্পাইনাল কর্ডে সমস্যার কারণে এখনও হাঁটতে-চলতে বেগ পেতে হয় ইয়ানুরকে।
একই ঘটনায় আহত হয় সুমি আক্তার। সকাল পৌনে ৯টার দিকে বিকট শব্দে যখন ভবনটি ধসে পড়ে, তখন তিনি মেশিন চালাচ্ছিলেন। সহকর্মীরা তাকে বলেছিলো, "যদি বাঁচতে চাস, তহলে পালা।” এর মধ্যেই ভবনটি ধসে গেলে তিনি আটকা পড়েন, অজ্ঞান হয়ে যান। তিনদিন পর তাকে উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনায় তার ডান পা পুরো অকেজো হয়ে যায়। মেয়ের জীবন বাঁচাতে তার বারা পা কেটে ফেলার অনুমতি দেন। কৃত্রিম পা নিয়ে এখন চলাফেরা করছেন সুমি। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি বছর পা বদলানোর কথা, যাতে লাখ খানেক টাকা লাগে। সক্ষমতা না থাকায় পুরানো পা দিয়েই তার দিন চালাতে হচ্ছে। “চিকিৎসার জন্য আমরা কোথায় যাবো? আমাদের এত টাকা নাই যে আমরা চিকিৎসা করতে পারবো। খাইতেই পারি না আবার কিসের চিকিৎসা?,” ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন সুমি আক্তার।
রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ১১৩৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গুরুতর আহত হয় ২৫০০-র বেশি মানুষ। আহতদের অনেকেই পঙ্গু হয়ে এখন মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। বর্তমানে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৪.৫ শতাংশ। ৪৭ শতাংশ শারীরিক অক্ষমতার কারণে কাজ করতে পারেন না, জানা যায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জরিপে। পৃথিবীতে আর কেউ যাতে এমন ট্রাজেডির শিকার না হয়, এমনটাই চান ইয়ানুর ও সুমি। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে হতাহতদের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবি তাদের।