ইরানের পরমাণু ক্ষেত্রে আক্রমণ চালানোর বিষয়ে দেশটি হুঁশিয়ার করল ইসরা্ইলকে

ফাইল- এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইরানের বুশেহর পরমাণু শক্তি স্থাপনায় দ্বিতীয় চুল্লির কাজ শুরু করার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী দিনে দেশটির পতাকা উড়ছে। নভেম্বর ১০,২০১৯।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম বলছে সপ্তাহান্তে ইসরাইলে তেহরানের আক্রমণের প্রতিশোধের কথা ভেবে ইরানের রিভ্যোলিউশানারি গার্ডস এর একজন ঊর্ধ্বতন জেনারেল ইসরাইলকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন তারা যদি ইরানের পরমাণু ক্ষেত্রে আক্রমণ করে তা হলে ইরান ইসরাইলের “পারমানবিক স্থাপনাগুলিকে” লক্ষ্য করে আঘাত হানবে।

ইরানের সেই হামলার বিরুদ্ধে ইসরাইল পাল্টা জবাব দেবার সংকল্প ব্যক্ত করে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

ইরান-সমর্থিত ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী ৭ অক্টোবর আক্রমণ চালানোর সঙ্গে সঙ্গে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইরান-সম্পৃক্ত গোষ্ঠীগুলিকে নিয়ে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

শনিবার রাতে ইসরাইলের উপর তেহরানের প্রথম সরাসরি আক্রমণ ছিল ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলার প্রতিশোধ। ঐ হামলায় ইরানে রিভ্যোলিউশানারি গার্ড কোরের দু জন জেনারেলসহ সাতজন সদস্য প্রাণ হারান।

ইরানের আক্রমণের প্রতিশোধ কোথায় কিংবা কবে নেয়া হবে সে সম্পর্কে ইসরাইলি কর্মকর্তারা কিছু জানাননি তবে এই গার্ড বাহিনীর পারমাণবিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান আহমাদ হাঘতালাব বলেন ইরান পরমাণু ক্ষেত্রের উপর যে কোন আক্রমণের পাল্টা জবাব দেবে।

ইরানের সরকারী বার্তা সংস্থা আইআরএনএ হাঘতালাবকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, “ এই ইহুদিবাদী সরকার [ইসরাইল] যদি আমাদের পরমাণু কেন্দ্র ও স্থাপনাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় তারা নিশ্চিত ভাবেই আমাদের প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবে। পাল্টা আক্রমণে উন্নত অস্ত্রের সাহায্যে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে অভিযান চালানো হবে”।

ইরানের শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন “ নিজেকে রক্ষা করার অধিকার ইসরাইলের আছে”। আর তার পর পরই ইরানের তরফ থেকে এই সতর্কবার্তা এলো।

হাঘতালাব বলেন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে ইসরাইলি আক্রমণের হুমকির কারণে তেহরানকে “তার ঘোষিত পারমাণবিক নীতি ও বিবেচনা থেকে সরে এসে তা নতুন করে ঠিক করতে হতে পারে”। তিনি অবশ্য বিস্তারিত আর কিছু বলেননি।

এই ইসলামি প্রজাতন্ত্রটি বরাবর বলে এসেছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচী হচ্ছে শান্তিপূর্ণ এবং পারমাণবিক বোমা তৈরির কথা অস্বীকার করেছে। তারা অবশ্য তাদের জাত-শত্রু ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের স্থাপনাগুলির উপর নাশকতামূলক আক্রমণ চালানোর জন্য এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পরমাণু বিজ্ঞানিদের হত্যা করার অভিযোগ এনেছে।

২০১৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই বলেছিলেন ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারতো কিন্তু তা করবে না কারণ ইসলামে এ জাতীয় অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের অন্যান্য কর্মকর্তারা বলেছেন যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচীর অব্যাহত সম্প্রসারণে মনে হয় তাদের সামরিক উদ্দেশ্য আছে।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচী খর্ব করার লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত এক ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র এক তরফা ভাবে বেরিয়ে আসে।

তখন থেকেই ইরান ২০১৫ সালের চুক্তিতে দেয়া শর্ত অনুযায়ী তার প্রতিশ্রুতি থেকে ক্রমশই সরে এসেছে। ঐ চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার কুটনৈতিক প্রচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে থমকে আছে এবং কিছু নিষেধাজ্ঞা আবার আরোপ করা হয়েছে।

হাঘতালাবের মতে, ইসরাইলের পরমাণু কেন্দ্রগুলিকে ইরান চিহ্নিত করেছে এবং “সকল লক্ষ্যস্থল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য” তাদের কাছে আছে।

ইসরাইলের পরমাণু অস্ত্র রয়েছে বলে ব্যাপক ভাবে তা সকলেরই জানা কিন্তু ইসরাইল কখনো তা স্বীকার করেনি।