সম্ভাবনার আলোয় আলোকিত তরুণদের দারুন একটি উদ্দ্যোগ

রাজধানী ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি থামলেই কিছু সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুর মুখ আমরা প্রায়ই দেখি। যাদের চুলে নেই তেল, পায়ে স্যান্ডেল, কখনো বা খালি পায়ে। জীর্ন পোষাক আর চেহারায় অভাবের ছাপ স্পষ্ট এই শিশুদের বেশিরভাগই ক্ষুধার যন্ত্রনায় বাড়িয়ে দেয় ভিক্ষার হাত। ব্যস্ত নাগরিকের কেউ কেউ সামর্থ অনুযায়ী তাদের দান করেন, কেউ কেউ ওদের দিকে তাকায় অবহেলা ভরে। তবে এর মাঝে এই অনিশ্চিত জীবনের কথা ভাবতেই আধাঁর নেমে আসে কিছু তরুণদের মনে। পথশিশুদের জন্য ভাল কিছু করার তাড়নায় অস্থির মন স্থির হয় প্রতিজ্ঞায়। শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়ের। সুবিধাবঞ্চিত, ভাগ্য হতে ছিটকে পড়া শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে যাত্রা শুরু হয় বিনা বেতনের নতুন একটি স্কুল, যার নাম “এ ফ্রি স্কুল”।

A Free School

​শুরুতে সুবিধাবঞ্চিত কয়েকটি পথশিশুকে খোলা আকাশের নিচে পড়ানো শুরু করে তারা। মানুষের কটুক্তি, ও অসহযোগীতার মাঝেই কাটছিল প্রথম দিকের দিনগুলি। “এ ফ্রি স্কুল” এর প্রতিষ্ঠাতা রেজওয়ান আহমেদ রোজেল জানান, “প্রথম থেকেই বেশ কিছু সংকট আমাদের ঘিরে ধরেছিল। যে বাচ্চাটা প্রথমদিন পড়তে এসেছিল, পরের দিন তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, আমরা খাবার দিতাম, তাই খাবারের লোভে কিছু বাচ্চা পড়তে আসতো থিকই, কিন্তু পরবর্তীতে তারা আর আসছিল না। ফলে আমরা সফল হতে পারছিলাম না। তখন সবাই মিলে প্রচন্ডভাবে একটা স্থায়ী ঠিকানার অভাব অনুভব করলাম। এরপর নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী একটি কক্ষ নেবার পরিকল্পনা করলাম। সমস্যা হলো জায়গা নির্বাচন করা নিয়ে। আমাদের সাধ্য ও ওদের সুবিধার কথা ভেবে কারওয়ান বাজার বস্তিতে একটা ছোট স্যাঁতসেঁতে কামরা ভাড়া করে আবার শুরু করি প্রচেষ্টা।”

বস্তির পরিবেশে থাকা মানুষগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধপ্রবণ ও নেশাগ্রস্থ। সুতরাং ঝুঁকির আশংকা ও নানা প্রতিকূলতায় সেখানে স্কুলটা পরিচালনা করাটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। পরবর্তীতে স্কুলের অবস্থান পরিবর্তন করে মিরপুর শিয়ালবাড়ীতে আনা হয়। স্কুলটির বয়স এখন পাঁচ বছর। স্কুলের এখন নিজস্ব একটি শ্রেণিকক্ষে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা পঞ্চাশউর্ধ। তাদেরকে পাঠদানের জন্য রয়েছেন দু'জন বেতনভুক্ত শিক্ষিকাও রয়েছে। তারা পরম মমতায় পাঠদান করে আসছেন বাচ্চাদের।

'এ ফ্রি স্কুল' সম্পূর্ণ অলাভজনক ও সেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠান। কিছু পরিচিতজন, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং কিছু প্রতিষ্ঠানের দানের টাকায় এটি চলছে। বর্তমানে স্কুলটিতে ছেলেদের তুলনায় মেয়ে শিক্ষার্থী বেশী।

'চলো স্বপ্ন দেখি স্বপ্ন দেখাই'- এই স্লোগানে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলছে তরুণেরা ও তাদের স্কুল।