পাসপোর্টে পরিবর্তন, বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশ

বাংলাদেশি পাসপোর্ট হঠাৎ আলোচনায়। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও। এমন নয় যে, বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মানে অভূতপূর্ব কোনো উন্নতি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী পাসপোর্টের মান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান হ্যানলে পাসপোর্টস ইন্ডেক্স ২০২১-এর রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশের পাসপোর্টের স্থান এখন ১০০তম। এক নম্বরে রয়েছে জাপান। নতুন ই-পাসপোর্ট নিয়েই যত আলোচনা। এই পাসপোর্ট থেকে কয়েকটি শব্দ প্রত্যাহার করায় বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনার খোঁড়াক যুগিয়েছে। জল্পনা বেড়েছে কূটনৈতিক মহলে। ৫০ বছর যাবৎ বাংলাদেশের পাসপোর্টে বলা ছিল, ইসরাইল ছাড়া পৃথিবীর সব দেশেই ভ্রমণ করা যাবে। অতি সম্প্রতি এই শব্দগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর পর থেকেই জল্পনা বেড়েছে, বাংলাদেশ কি ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে চলেছে? বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তকে ইসরাইল স্বাগত জানিয়েছে। দেশটির তরফে বলা হয়, এটা একটি সুসংবাদ। বাংলাদেশ যাতে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এই আশাবাদও ব্যক্ত করা হয়। এর পর থেকে বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশ-ইসরাইল সম্পর্ক নিয়ে নানামুখী রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকেও খোলামেলা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদান মিডিয়াকে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত। এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে আমাদের। বাংলাদেশেও বিভিন্ন মহল থেকে নানা প্রশ্ন তোলা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও খোলাসা করে বলেন, পাসপোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার অর্থ এই নয় যে, বাংলাদেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে যাচ্ছে। ড. মোমেন বলেন, এর কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেইনি। বিদেশনীতি আগে যা ছিল তাই আছে। বাংলাদেশের কোনো নাগরিক ইসরাইল সফরে গেলে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হবেন, এই হুঁশিয়ারিও দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

Your browser doesn’t support HTML5

পাসপোর্টে পরিবর্তন, বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশ

পাসপোর্টে কেন এই পরিবর্তন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এর জবাব দিয়েছেন সরাসরি। পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে গিয়েই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত মিডিয়ার কাছে এরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, মালয়েশিয়ার মতো দেশ পাসপোর্টে ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। তাহলে কি আমরা বলবো মালয়েশিয়ার পাসপোর্ট আন্তর্জাতিক মানসম্মত নয়! তবে কি বাংলাদেশের পাসপোর্ট এতকাল আন্তর্জাতিক মানসম্মত ছিল না? কেউ কেউ বলছেন, এটা শুধু আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নয়। এর পেছনে রয়েছে সচেতনভাবে নেয়া একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশে দুই ধরনের পাসপোর্ট রয়েছে। একটি মেশিন রিডেবল। অন্যটি ই-পাসপোর্ট। মিশেন রিডেবল পাসপোর্টে এখনও ইসরাইল ভ্রমণ নিষিদ্ধ। কোটি কোটি বাংলাদেশি এই পাসপোর্ট বহন করছেন। নতুন ই-পাসপোর্টে ইসরাইল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা নেই। এই অবস্থায় দুটি পাসপোর্ট নিয়ে কোনো বিড়ম্বনা হবে কিনা সেটা অবশ্য নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

পাসপোর্টে এই পরিবর্তন আনার পর বাংলাদেশি নাগরিকরা ইচ্ছে করলে তৃতীয় কোনো দেশ থেক ইসরাইল যেতে পারবেন। যদিও নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্বেও বেশকিছু বাংলাদেশি ইসরাইল সফর করেছেন। যা কিনা ইতিমধ্যেই মিডিয়ায় এসেছে। ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন বিধিতে এ ধরনের ভ্রমণ আটকাতে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ খুবই কম। বিধি রয়েছে ১৭টি।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন মিডিয়াকে বলেছেন, তার মনে হয়না ই-পাসপোর্টধারী কোনো বাংলাদেশি ভিসা পেলে দেশটিতে সফরে যেতে কোন সমস্যা হবে।

উল্লেখ করা যায়, এক সময় বাংলাদেশি নাগরিকদের তাইওয়ান ও দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণ নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৯৪ সনে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে বাংলাদেশ। ২০০৪ সনে পাসপোর্ট থেকে তাইওয়ানের নামটি বাদ দেয়া হয়।