পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুহার রোধ করা সম্ভব

যশোরে ইউএসএআইডি ও ভয়েস অব আমেরিকার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিক এম. আইউব, যশোর থেকে এই রিপোর্টটি পাঠিয়েছেন:

কেবলমাত্র পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করে বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ মাতৃমৃত্যু রোধ করা সম্ভব। দম্পতিরা একটু সচেতন হলে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারেও সফল হতে পারেন তারা। যশোরে ইউএসএইডের অর্থায়নে ভয়েস অফ আমেরিকা আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।

mother

মাতৃ ও শিশু মৃত্যু রোধ করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিরা পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, বাংলাদেশে ৬৫ শতাংশ শিশুর বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই। বিয়ের পরপরই তাদেরকে সন্তান জন্ম দিতে হয়; অর্থ্যাৎ শিশুর কোলে শিশু এসে যায়। অপরিণত বয়সে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মা মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে যান। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ মাতৃমৃত্যু হয় শিশুর জন্মের আগে অথবা পরে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শতকরা ২০ ভাগ মা মারা যান অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং একলামশিয়া (খিঁচুনি) রোগে আক্রান্ত হয়ে। অথচ একটু সচেতন হলে এ ধরনের মৃত্যুর হাত থেকে এসব মা’কে রক্ষা করা সম্ভব। ডেলিভারির ১০ মিনিটের মধ্যে কোন মা’কে মিজোপ্রস্টোল নামে একটি ট্যাবলেট খাওয়াতে পারলে তিনি খিঁচুনির হাত থেকে রক্ষা পাবেন। এই ট্যাবলেটের দাম প্রতিটি মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। মাত্র ১৮ টাকা দিয়ে মিজোপ্রস্টোল ট্যাবলেটটি কেনা যাবে বলে কর্মশালায় জানানো হয়। শুধুমাত্র জানা থাকতে হবে।

child and mother death

কেবল তাই না, এলবুমিন পরীক্ষা করে এবং রক্তচাপ মেপে একলামশিয়া(খিঁচুনি) থেকে একজন মা কে রক্ষা করা যায়। কর্মশালায় জানানো হয়েছে, অপরিপক্ক শিশুকে বাঁচাতে ইনকিউবেটরে রাখতে হয়, যা ব্যয়বহুল। অনেকের পক্ষে কষ্টসাধ্য। অথচ এই অপরিপক্ক শিশুকে ‘ক্যাঙ্গারু’ মাদার কেয়ার’ পদ্ধতি ব্যবহার করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। পদ্ধতিটি হচ্ছে দিন কিংবা রাতের একটি নির্দিষ্ট সময় শিশুকে তার মায়ের শরীরের সাথে জড়িয়ে রাখতে হবে।

কর্মশালায় উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশে তিনটি ‘বিলম্বে’ মাতৃমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বিলম্ব তিনটি হচ্ছে, বাড়িতে বিলম্ব, হাসপাতাল পর্যন্ত কীভাবে নেওয়া হবে সেই বিলম্ব এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়ার বিলম্ব। কর্মশালা চলাকালীন ফিল্ডট্রিপে স্থানীয় সূর্যের হাসি ক্লিনিকে গিয়ে মা ও শিশুদের সেবা প্রদানের বিভিন্ন দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে নবজাতক ও তার মা কে নিবিড় পরিচর্যার মধ্যে রাখা হয়। কেবল তাই না, গর্ভকালীন মায়ের পরিচর্যা বৃদ্ধি করতে সূর্যের হাসি ক্লিনিকের পক্ষ থেকে গর্ভবতী মায়ের বাড়িতে লাল পতাকা টাঙ্গানো শুরু হয়েছে। যাতে করে পতাকা দেখে সকলে বুঝতে পারে ঐ বাড়িতে একজন গর্ভবতী মা রয়েছেন। তার সুবিধা অসুবিধার প্রতি যাতে সংশ্লিষ্টরা সর্বক্ষণিক নজর রাখতে পারে।

কর্মশালার বিভিন্ন সেশনে আলোচনা করেন ইউএসএইড, এনজিও হেলথ সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্ট এবং এনএইচএসডিপি বাংলাদেশের চিফ অব পার্টি ড. হালিদা এইচ আখতার, হেলথ এন্ড ন্যুট্রিশন, মামণি এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের ডিরেক্টর ড. ইশতিয়াক মান্নান প্রমুখ।