ভবিষ্যতে আমরা আমাদের স্বপ্নের পরিধি বড় করতে পারব- মাহফুজা আক্তার কিরণ

ছবিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণকে দেখা যাচ্ছে।

নারী ফুটবলে বাংলাদেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। জনপ্রিয় এই খেলায় মেয়েদের ধারাবাহিক নৈপুণ্যে আশাবাদী বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এর তথ্য অনুযায়ী ফুটবল খেলতে আগ্রহী নারীদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। বয়সভিত্তিক বাছাইতে আবেদনকারীদের সংখ্যা হিসাব করলে প্রায় ২ লক্ষ। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। সম্প্রতি ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা সার্ভিসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন মহিলা ফুটবলের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নানান তথ্য। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন আজমীর হাসান কনক। ​

ভিওএ বাংলাঃ বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের বর্তমান অবস্থা কি?

মাহফুজা আক্তার কিরণঃ নিয়মিত অনুশীলন খেলোয়াড়দের ভালো পারফর্মেন্সের সহায়ক। তাছাড়া, ম্যাচ প্রাকটিস এমন একটি বিষয় যার কোনও বিকল্প হয় না। কোভিড এর কারণে জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের ম্যাচ ও অনুশীলন সূচী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফিটনেস কমে গিয়েছে। তারপরও, আবাসিক ক্যাম্পে থাকায় এবং কোভিড এর মধ্যের গ্যাপ -এ উইমেন্স ফুটবল লীগ চলমান থাকায় মেয়েরা মোটামুটি ভালো অবস্থায়ই আছে বলা যায়।

ভিওএ বাংলাঃ নারী ফুটবলার তৈরি তে বাফুফের পদক্ষেপগুলি কি কি?

মাহফুজা আক্তার কিরণঃ পাইপলাইনে প্লেয়ার্স ফ্লো নিশ্চিত করতে ইউনিসেফ ও জাপান ফুটবল এসোসিয়েশন-এর সহায়তায় আমরা নিয়মিতভাবে ট্যালেন্ট হান্ট, ট্রেনিং ক্যাম্প, এডভান্সড ডায়েটিং ট্রেনিং ও বয়সভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন করছি। আমাদের মত গরীব ফেডারেশন-এর পক্ষে বিদেশে এডভান্সড কন্ডিশনিং ক্যাম্প বা লং টার্ম ট্রেনিং করানোটা এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না।

ভিওএ বাংলাঃ এ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অর্জন কি?

মাহফুজা আক্তার কিরণঃ বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের মাঠের পারফর্মেন্স এখনও দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে খুব একটা সফলতা এনে দেয়নি। তবে আমাদের দলটা তরুণ ও অভিজ্ঞদের নিয়ে পরিণত হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমরা আমাদের স্বপ্নের পরিধি বড় করতে পারব আশা করি। এ পর্যন্ত শিলিগুড়িতে সাফ-এ রানার্স আপ হওয়াটাই জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের বড় সাফল্য। আর যদি সাফল্যের কথা বলি, মেয়েদের বয়সভিত্তিক প্রতিটি জাতীয় দলের সাফল্য অনেক। এএফসি অ-১৪,১৬, সাফ অ-১৫, ১৮, জকি ক্লাব কাপ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্ণামেন্টে চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স-আপ হবার সাফল্য আমরা সকলেই জানি। এএফসি অ-১৬ থাইল্যান্ড-এ গত বছর শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ান অ-১৬ দলের সাথে বাংলাদেশ ২-২ ড্র করে। Bangomata International Tournament Championship ,২০১৬-২০১৯ পর্যন্ত বয়সভিত্তিক ও জাতীয় দল মিলে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে ৮২ টি যার মধ্যে আমাদের জয়ের পাল্লাই ভারি । তবে বয়সভিত্তিক যে দলগুলো ধারাবাহিক ভাবে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে সফলতা পেয়ে এসেছে সেইসব খেলোয়াড়েরা এখন জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্তির পর্যায়ে আছে তাই ভবিষ্যতে আমরা ভালো কিছুই প্রত্যাশা করি।

ভিওএ বাংলাঃ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলকে ঘিরে আসন্ন কোন উদ্যোগ বা পরিকল্পনা আছে কিনা?

মাহফুজা আক্তার কিরণঃ স্থানীয়ভাবে আমরা ক্যাম্প, ট্রেনিং করাচ্ছি কিন্তু প্রয়োজন বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা। আমাদের বেশ কিছু ম্যাচ আয়োজন এবং অংশগ্রহণের পরিকল্পনা ছিল যা কোভিড পরিস্থিতির কারণে সম্ভব হয়ে উঠছে না।

ভিওএ বাংলাঃ সারা দেশে মহিলা ফুটবল আগ্রহী নারীদের সংখ্যা কেমন?

মাহফুজা আক্তার কিরণঃ বয়সভিত্তিক বাছাইতে আবেদনকারীদের সংখ্যা হিসাব করলে প্রায় ২ লক্ষ।

ভিওএ বাংলাঃ মহিলা ফুটবলে কোন ইতিবাচক পরিবর্তন / সুখবর আছে কিনা?

মাহফুজা আক্তার কিরণঃ ইতিবাচক পরিবর্তন বা সুখবর বলতে আগেই বলেছি বয়সভিত্তিক যে দলগুলো ধারাবাহিক ভাবে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে সফলতা পেয়ে এসেছে সেইসব খেলোয়াড়েরা এখন জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্তির পর্যায়ে আছে তাই ভবিষ্যতে আমাদের ফলাফল ভালো হবে এটাই প্রত্যাশা। আমি দায়িত্বে আসার পর থেকে মহিলা দল প্রায় সকল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছে। বড় টুর্নামেন্টে ভালো প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন দেশ সফর করেছে যার মধ্যে রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারত, নেপাল এবং চায়নার মত দেশ। বাফুফে ভবনে ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬০ জন মেয়ে ফুটবলারকে নিয়ে আবাসিক ক্যাম্প চলমান রয়েছে। যেখানে মেয়েরা বেতনভুক্ত এবং ইন্স্যুরেন্স কভারেজ পাচ্ছে। মেয়েরা পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে। ফুটবল খেলে মেয়েরা কিভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে তা আমরা হাতে কলমে দেখিয়ে দিচ্ছি। এখন সানজিদা, কৃষ্ণা, আঁখি, মারিয়া মান্ডা, তহুরা সবাইকে গোটা বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা চেনে। ওদের ফ্যামিলিতে এখন ওরাই মূল উপার্জনশীল ব্যক্তি। মারিয়া- সানজিদাদের পাশাপাশি অনেক মেয়ে বর্তমানে ফুটবলে উঠে আসছে; কারন আমরা মেয়েদের স্বচ্ছল রাখার জন্য অনেক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তার দিকেও যথেষ্ট সজাগ দৃষ্টি রাখছি। মহিলা ফুটবলে ভালো একটা অবকাঠামো তৈরির জন্য জেএফএ অ-১৪ ও ইউনিসেফ অ-১৬ প্রতিবছরই হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া মহিলা লীগও চালু হয়েছে।

ভিওএ বাংলাঃ মহিলা ফুটবলে লীগ বা টুর্নামেন্ট কেমন করছে? এখান থেকে ইতিবাচক কিছু হচ্ছে আশা করা যাচ্ছে কিনা?

মাহফুজা আক্তার কিরণঃ কোভিড পরিস্থিতির কারণে মহিলা লীগ বা টুর্নামেন্ট প্রত্যাশামাফিক আয়োজন বা অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ভ্যাক্সিনেশনের পরে স্বাভাবিকতা ফিরে এলে এ অবস্থা নিশ্চয়ই বদলাবে।