নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু ২০২০ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে

বাংলাদেশে লক ডাউন শিথিল করার পর শত শত মানুষ রাজধানী ঢাকায় ফিরছেন। ফাইল ফটো- রয়টার্স

গত বছরের ৮ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার তথ্য সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়। তারও এক মাস আগে ভাইরাসটি বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে সারা দেশে ছড়াতে শুরু করে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর। ছুটি ঘোষণা করায় অনেকে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে নিজ নিজ এলাকায় চলে যান। মানুষের এই যাতায়াত সংক্রমণ ছড়াতে সহায়ক হয় বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি সাতটি প্রতিষ্ঠানের করা এই গবেষণায় বলা হয়েছে, সে সময় বিপুলসংখ্যক মানুষের ঢাকা ছেড়ে যাওয়াই দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তারের প্রাথমিক কারণ।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গবেষণার বিষয়টি গণমাধ্যমকে অবহিত করে। এতে বলা হয়, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), আইসিডিডিআরবি, আইদেশি, বাংলাদেশ সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম, যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্যাঙ্গার জিনোমিক ইনস্টিটিউট, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বাথের বিজ্ঞানীরা গবেষণাটি পরিচালনা করেন।

২০২০ সালের মার্চ মাসে এই গবেষণাটি শুরু হয়। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রবেশ, বিস্তৃতি এবং এর বিস্তার প্রতিরোধে বিভিন্ন সময়ে বিধিনিষেধ এবং জনসাধারণের গতিবিধির ভূমিকার ওপর ভিত্তি করে এই বিশ্লেষণধর্মী গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণাটি ৪ঠা সেপ্টেম্বর নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গবেষণায় প্রাথমিকভাবে গত বছরের মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ৩৯১টি করোনাভাইরাসের জিনোম বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষণাপত্রটির মূল-লেখকদের একজন ড. লরেন কাউলি বলেন, জেনোমিক এবং মবিলিটি ঢাকা থেকে বিভিন্ন ডাটা স্ট্রিম একত্রিত করে আমরা কীভাবে করোনাভাইরাস বাংলাদেশের ছড়িয়ে পড়েছিল তা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছি। এই গবেষণাটিতে মহামারি প্রতিরোধে জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর কার্যকারিতা দেখানো হয়েছে যা ভবিষ্যতে অন্যান্য মহামারির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিকোলাস টমসন গবেষণার বিষয়ে বলেন, আমরা বহু বছর ধরেই বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ওপর একসঙ্গে কাজ করছি। বিজ্ঞানীরা যখন জনস্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সাথে যৌথভাবে একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করেন তখন কতটা সাফল্য অর্জন করা যায় এই গবেষণাপত্রটি তারই একটি বাস্তব উদাহরণ।

হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথ-এর অধ্যাপক ক্যারোলিন বাকি বলেন, মবিলিটি ডাটা, প্রথাগত চলমান সার্ভেলেন্স সিস্টেমের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এই গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এ ধরনের একটি মিলিত বিশ্লেষণধর্মী গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতটা মূল্যবান ভূমিকা রাখতে পারে।

আইসিডিডিআরবি’র জেষ্ঠ্য বিজ্ঞানী এবং এই গবেষণা নেতৃত্ব প্রদানকারীদের একজন ড. ফেরদৌসী কাদরী বলেন, পুরো পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে কয়েক মাস পর মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন ভেরিয়েন্ট তৈরি হচ্ছে এবং এর মধ্যে কিছু ভেরিয়েন্ট ভ্যাকসিন-এর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। টিকাগুলোর কার্যকারিতা বোঝার জন্য এধরনের গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে।

আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন গবেষণার বিষয়ে বলেন, এই কনসোর্টিয়াম বিভিন্ন সময়ে নীতিনির্ধারকদেরকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে সহায়তা করে থাকে। তিনি বলেন, গবেষণা কাজ চলমান থাকবে এবং এর মাধ্যমে আমরা আমাদের নীতি নির্ধারকদের জন্য কোভিড-১৯ এর বিস্তার ঠেকাতে প্রয়োজনীয় প্রমাণ-ভিত্তিক তথ্য সরবরাহ করতে পারবো।

আইসিডিডিআরবি’র বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গবেষণায় ফেসবুক ডেটা ফর গুড, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি আজিয়াটা লিমিটেড জনসংখ্যা মোবিলিটি তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে। বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সার্স-কোভ-২ নমুনার সিকোয়েন্সিং-এ সহায়তা দিয়েছে।