বৃটেনে এক দশকে তিনজন সাংসদ খুন হবার পর দেশটির রাজনীতির ঐতিহ্য পাল্টে যেতে পারে

ব্রিটিশ আইনপ্রনেতা ডেভিড আমেস হত্যার প্রতিবাদে লন্ডনে হাউস অব পার্লামেন্টের বাইরে সমাবেশ- অক্টোবর ১৮, ২০২১- এপি

বৃটেনে গত দশ বছরে তিনজন সাংসদ খুন হওয়ার পর সে দেশে রাজনীতির ঐতিহ্য বদলে যেতে পারে। সর্বশেষ সাংসদ স্যার ডেভিড অ্যামেস হত্যাকাণ্ডের পর নিরাপত্তা বলয়ে এমপিদের নিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন জোরালোভাবে উঠেছে। এমপিদের জনগণের মুখোমুখি হতে বারণ করা উচিত এমনটাই বলছেন কেউ কেউ। নিজ নির্বাচনী এলাকায় বৈঠকে অংশ নিতে গিয়েই অ্যামেস খুন হন। এমপিরা সাধারণত খোলামেলাভাবে জনগণের সঙ্গে কথা বলে থাকেন। তাদের সুখ-দুঃখের কথা জানতে চান। ভোটারদের সামাজিক অনুষ্ঠানেও তারা অংশ নেন। একদা নিরাপত্তার বালাই ছিল না।

গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, জনগণের সঙ্গে সরাসরি মোলাকাত। এখন বলা হচ্ছে- এমপিদের নিরাপত্তা আগে, পরে বৈঠক। পরামর্শ এসেছে, এসব বৈঠকে পুলিশকে পাশে রাখতে হবে। এছাড়া পরামর্শ এসেছে আগাম বুকিং করা, আপনি কাকে দেখছেন, কার সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন তা যাচাই-বাছাই করা এবং অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর সাক্ষাৎ করুন, মিলিত হোন।

ডেভিড অ্যামেসের আগে লেবার পার্টির একজন এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন এমপি খুন হওয়ার পর একইভাবে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বিশেষ করে লেবার পার্টির এমপি জো কক্সের হত্যার পর এমপিদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। অনেকের বাড়িতে এবং অফিসে প্যানিক বোতাম লাগানোর মতো ব্যবস্থা নেয়া হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেছেন, জনগণের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক বাতিল করা উচিৎ বলেই মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ডেভিড অ্যামেসের হত্যার পর স্থানীয় পুলিশ বাহিনী সাংসদদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের নিরাপত্তা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। হাউস অব কমন্স কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের মধ্যে এ নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।

২৫ বছর বয়স্ক আলী হারবি আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।সে ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীর মতবাদে বিশ্বাসী। জন্মসূত্রে একজন ব্রিটিশ। কিন্তু তার বাবা-মা সোমালীয়। মেডিসিনের ছাত্র আলীর বাবা হারবি আলী কুলেন সোমালিয়ার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ছিলেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। তার ছেলের এই কাণ্ডে তিনি খুবই বিব্রত। সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি আঘাতপ্রাপ্ত বোধ করছেন। আলী হারবির চাচা চীনে এখন সোমালিয়ার রাষ্ট্রদূত। খুবই শিক্ষিত পরিবার। ইউটিউব থেকেই জঙ্গিমতবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে লন্ডনের একটি থানায় আলী হারবিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জানার চেষ্টা করা হচ্ছে, এর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত ছিল কি-না। আল কায়েদার সঙ্গে হারবির কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল কি-না তাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, সন্দেহভাজন এই জঙ্গি সরকারি কর্মসূচি প্রিভেন্ট স্কিমের তালিকায় ছিল। কিন্তু তার সম্পৃক্ততা ছিল সংক্ষিপ্ত। যদিও এমআই-৫ এর ওয়াচ লিস্টে তাকে রাখা হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এমপি অ্যামেসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সে আগেই বুক করেছিল। তার সময় আসতেই রুমে ঢুকে সে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গেই এমপির মৃত্যু হয়।