ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন নিয়ে সরকার দোটানায়

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন বা পরিবর্তন হবে কিনা, এ নিয়ে সরকার এখনো দোটানায়। শুক্রবার সকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ সম্পর্কে কিছুটা ইঙ্গিত দিলেও দুপুরের পর আবার বলেছেন, এমন কথা তিনি বলেননি। বলেছেন, অপেক্ষা করুন কিছুদিনের মধ্যেই দেখতে পাবেন। আখাউড়া রেলস্টেশন চত্বরে সাংবাদিকরা মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন বা পরিবর্তন করার বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভিন্ন কথা বলেছেন। তার ভাষায়, প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েকজন দাঁড়িয়ে বললেই আইন বাতিল করতে হবে তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশ তো কয়েকজন নাগরিকের নয়, বহু নাগরিক আছেন। নাগরিক বলতে শুধু ওই কয়েকজন নাগরিক যারা বক্তৃতা দেন তাদের বুঝায় না। গত সপ্তাহে আইনমন্ত্রী একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ওই আইনে কোনো অপরাধের অভিযোগ এলে পুলিশের তদন্তের আগে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। বা তার বিরুদ্ধে মামলা নেয়া যাবে না। এমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা বলেছি যে, সরাসরি মামলা নেয়া হবে না। কোনো অভিযোগ এলে পুলিশ প্রথমে তদন্ত করে দেখবে। এবং তদন্ত সাপেক্ষে তারপর মামলা নেয়া হবে।

Your browser doesn’t support HTML5

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন নিয়ে সরকার দোটানায়

এরপর থেকেই এই আইনটির সংশোধন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে কিন্তু আইনমন্ত্রীর সর্বশেষ অবস্থানে এটা স্পষ্ট নয়, এই আইনটি সংশোধন হচ্ছে কিনা! ২০১৮ সনের সেপ্টেম্বর মাসে যখন আইনটি প্রণয়ন করা হয় তখন নানা মহল থেকেই আপত্তি ছিল। আশঙ্কা ছিল এই আইনটির অপপ্রয়োগ ঘটবে। অতিসম্প্রতি লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর পর এই আইনটি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ওঠে আসে। মুশতাককে ১০ মাস কারাগারে আটক রাখা হয়। ছয়বার তার জামিন নাকচ হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগাগোড়াই বলে আসছে, এই আইনটিতে অস্পষ্টতা রয়েছে অনেক। বিশেষ করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা ও দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করার অভিযোগে পাইকারিভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গত এক বছরে এই আইনের অধীনে ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি পাওয়া কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত বছরের ২রা মে গ্রেপ্তার করে তাকে কোথায় রাখা হয়েছিল তা তিনি জানেন না। বলেছেন, ৬৯ ঘণ্টা তাকে অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়। এসময় তাকে নির্যাতন করা হয়।

ওদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান ররি মুঙ্গোভেন বলেছেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি ভীষণ অস্পষ্ট এবং সরকারের সমালোচকদের ঠেকাতেই ব্যবহার করা হচ্ছে। মুঙ্গোভেন বলেন, এই আইনের অনেক ধারাই সিভিল সোসাইটির কণ্ঠরোধ, সাংবাদিক ও সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই আইন বাক-স্বাধীনতার ওপর আঘাত। আন্তর্জাতিক আইন বা বাংলাদেশের সংবিধানও এটিকে সমর্থন করে না।