গত কয়েক দশক ধরে রোহিংগা শরণার্থীরা বাংলাদেশে বসবাস করছে কিন্তু ২০১৭ সালে অত্যাচার, গুম খুন, ধর্ষণ এবং বাড়ি ঘর জ্বলিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার পর ব্যাপক সংখ্যক রহিংগা মিয়ানমার ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। প্রায় ১০ লক্ষের উপরে রহিংগা উদ্বাস্তু বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। রাহিংগাদের সাহায্যে বাংলাদেশ সরকার, জনগণ এবং স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সমাজ এগিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী রহিংগারা, তাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ঐ পরিস্থিতির উন্নয়নে নানা রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আরাকান রোহিংগা ইউনিয়ন ফর দ্যা রাইট অফ রোহিংগা ইন বার্মা/মায়ানমারের মহা পরিচালক ডঃ ওয়াকার উদ্দিন। তিনি পেনসালভানিয়া ষ্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সংগে সংগে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন আরাকান রোহিংগা
ইউনিয়নের সংগে তিনি বলেন, রোহিংগা সংকট হচ্ছে বিশাল এক সমস্যা এবং এই সমস্যা খুবই গুরুতর। আমেরিকায় আমরা যারা বসবাস করছি আমরা এখনে বেশ কিছু কাজ করছি। রোহিংগাদের নানা বিষয়গুলো আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস এবং নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন এলাকার কেন্দ্রীয় সরকারের নানা সংগঠনের কাছে তুলে ধরছি। মিয়ান্মারের সংখ্যালঘু রোহিংগাদের মৌলিক অধিকারকেবল মাত্র মানবিক দিকগুলো নয় রাজনৈতিক দিকগুলোও আমরা তুলে ধরছি।
তিনি বলেন, রোহিংগা সংকটের প্রধান এবং মৌলিক কারণই হচ্ছে তাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ভারত এবং অন্যান্য দেশে শরণার্থী শিবিরের জন্য মানবিক ত্রাণ সাহায্যের পাওয়ার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার সংগে আরাকান রোহিংগা ইউনিয়ন ফর দ্যা রাইট অফ রোহিংগা ইন বার্মা কাজ করছে।
ডঃ ওকার উদ্দিন বললেন, এছাড়াও মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আইডিপি ক্যাম্পে যে সব রোহিংগা রয়েছে তাদের জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে তাদের জন্য আরও সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। আমদের একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না যে ঐ সব রোহিংগা যারা রাখাইনে রয়েছে তারা কিন্তুবাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিংগাদের মত তেমন কোন সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে না। জাতি সংঘসহ অন্যান্য সংস্থা রাখাইন রাজ্যের আই্ডিপি ক্যাম্পের জন্য যাতে সাহায্য বাড়ায় সে চেষ্টা করছি।
রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে অনেক পরিবারই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যেমন মাওয়ান্দ শহর, পুতিদান এবং অন্যান্য শহরেও বাস্তুহারার সংখ্যা অনেক। রোহিংগা সমাজের জন্য যা এক বিশাল সমস্যা। বহুরোহিংগাপরিবার ঐসব বাস্তুহারাদেরআশ্রয় দিয়েছে। আরাকান রোহিংগা ইউনিয়ন জাতিসংঘসহ বিশ্বব্যাপী নানা সাহায্যকারীসংস্থা, সরকার ও অন্যান্য দেশের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছে।
বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিংগা শরণার্থীদের এবং রাখাইন রাজ্যের আইডিপি উদ্বাস্তু ক্যাম্পে জন্য উপযুক্ত---টেকসই ত্রাণ সাহায্য সহযোগিতা চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আরাকান রোহিংগা ইউনিয়ন যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ডঃ ওয়াকার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নানা স্থানে বিভিন্ন সম্প্রদায়, গোষ্ঠী বা সমাজে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও কলেজ ক্যাম্পাসে এবং অন্ত-ধর্মীয় সমাজ, খৃষ্টান ও ইহুদী সমাজ, সোশাল মিডিয়ায় যেমন ফেইস বুক বা টুইটারের মাধ্যমে আমরা সচেতনতা সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, এই জনগোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদের মানবিক সাহায্য সহযোগিতা চালিয়ে রাখা যে গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমরা সকলেই জানি।
তিনি আরও বললেন, আমি আরও কিছু জিনিষ তুলে ধরতে চাই। তবে রোহিংগা সমস্যার প্রধান বা মৌলিক কারণ আমাদের খুঁজে বার করা খুবই প্রয়োজন। আর এর জন্য অবশ্যই রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান প্রয়োজন। মিয়ানমার সরকারের সংগে জাতী সংঙ্ঘ সাধারণ পরিষদ মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা পরিষদ, আমেরিকা ও ইউরোপীয় সরকার প্রধানদের, ওআইসিকে সর্বোপরি মিয়ানমারকে সংগে নিয়েই রাজনৈতিক ভাবে এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বার করাতে হবে-- এর জন্য প্রয়োজন সম্পৃক্ততার। আর সে উদ্দেশ্যেই আমরা আরাকান কাজ করে যাচ্ছি।
ডঃ ওয়াকার উদ্দিনের মত রোহিংগা এবং আন্তর্জাতিক সমাজ জানেন যে রোহিংগা সংকট--- রাজনৈতিক সমাধানের মধ্য দিয়েই নিশ্চিত করে, তাদের মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং রোহিংগাদের মৌলিক অধিকারগুলোর নিশ্চিত করে সেসবের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। অন্যথায়, ভাসমান এই জনগোষ্ঠী কখনই তাদের শেকড় শক্ত করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা না করেবিকশিত হতে পারবে না।
Your browser doesn’t support HTML5
ডঃ ওয়াকার উদ্দিনের সাক্ষাৎকার
Your browser doesn’t support HTML5
WD interview