ডাউন সিনড্রোম : প্রয়োজন বাড়তি যত্ন

Kosovo Down Syndrome

বিশ্বে প্রতি ৮০০ শিশুর মধ্যে একজন ‘ডাউন সিনড্রোম’ শিশু জন্মগ্রহণ করছে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৭ মিলিয়ন ডাউন সিনড্রোম মানুষ রয়েছে। আর বাংলাদেশে এই সংখ্যা ২ লাখ। এদেশে প্রতি বছর পাঁচ হাজার ও প্রতিদিন প্রায় ১৫ জন ‘ডাউন’ শিশুর জন্ম হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। এমন বাস্তবতায় সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ২১ মার্চ ‘আমার বন্ধু, আমার কম্যুনিটি’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ‘বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস’ পালিত হচ্ছে।

‘ডাউন সিনড্রোম’কোনো রোগ নয়, বরং এটি দেহের একটি জেনেটিক পার্থক্য (ভিন্নতার মাত্রা) এবং ক্রোমোজোমের একটি বিশেষ অবস্থা। এ প্রসঙ্গে বারডেম হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তাহমীনা বেগম বলেন, আমাদের শরীরে ৪৬টি ক্রোমোজম থাকে। ডাউন সিনড্রোম বা ডাউন শিশুর জন্ম হয় ২১ নম্বর ক্রোমোজমটি তিনটি থাকার কারণে। এ অতিরিক্ত ক্রোমোজমটির কারণে ডাউন শিশুর বিশেষ কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন: চোখ উপরের দিকে টানা থাকে, ছোট কান, চোখ দুটো দূরে দূরে থাকে, মাংসপেশির শিথিলতা বা তুলতুলে নরম শরীর, হাতের তালুতে একটি মাত্র রেখা, জিহ্বা বের হয়ে থাকা ইত্যাদি। তারা অন্য শিশুদের তুলনায় বসতে, দাঁড়াতে, হাঁটতে বা কথা বলতে শেখে দেরিতে। সবকিছুই তাদের দেরিতে হয়।

মেয়েদের বেশি বয়সে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে ডাউন সিনড্রোম ঝুঁকি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্রোমোজোমের পরিবর্তন বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু এটির সঙ্গে মায়ের বেশি বয়সে সন্তান ধারণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিশেষ করে ৩৫ বছর বয়সের পর ঝুঁকি বাড়তে থাকে। সাধারণত নারী যত বেশি বয়সে মা হবেন, তাঁর ডাউন শিশু জন্মাদানের আশঙ্কা তত বেশি।

অনেক বাবা-মা জানেন না তাদের আদরের শিশুটি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত। আবার অনেকে জানলেও জানে না তার ডাউন সিনড্রোম সন্তানের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করতে হবে। কীভাবে তাকে স্বাভাবিক শিশুর মতো গড়ে তুলতে হবে? ডাউন শিশুর বাড়তি যত্ন প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি অধ্যাপক তাহমীনা বলেন, প্রথমে ডাউন শিশুর সনাক্ত প্রাথমিক অবস্থায় হতে হবে। সেটি জেনে গেলে বাবা-মা তাদের সেভাবেই লালন-পালন করতে পারবেন। প্রয়োজনে বিশেষ স্কুলে পাঠাতে পারবেন। বাচ্চা স্বাস্থ্য সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। বাড়তি যত্ন নেবেন। এটুকু ছাড়া আর কিছু নেই আসলে। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, কোন পরিবারে একটি শিশু ডাউন সিনড্রোম হলে পরবর্তী বাচ্চাও ডাউন শিশু হওয়ার ১০ থেকে ২০ শতাংশ ঝুঁকি থাকে।

প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করা, সঠিক ও বাড়তি যত্ন, পুষ্টিকর খাবার, কথা বলা ও ভাষা শেখার প্রশিক্ষণ এবং ফিজিক্যাল থেরাপি নিশ্চিত করা গেলে ডাউন সিনড্রোম শিশুরা অনেকটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। এজন্য প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি।

Your browser doesn’t support HTML5

ডাউন সিনড্রোম : প্রয়োজন বাড়তি যত্ন