ভারতের কৃষক আন্দোলন যুবসমাজের বেকারত্বের সমস্যাটিকেও তুলে ধরেছে

ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লির উপকণ্ঠে ভারতীয় কৃষকদের সাম্প্রতিক সহিংস বিক্ষোভগুলি বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিবাদ গুলির অন্যতম হিসাবে অভিহিত হতে চলেছে।

ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লির উপকণ্ঠে ভারতীয় কৃষকদের সাম্প্রতিক সহিংস বিক্ষোভগুলি বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিবাদ গুলির অন্যতম হিসাবে অভিহিত হতে চলেছে। দুই মাস ধরে তাদের লড়াই চলছে কৃষিক্ষেত্রে তিনটি নতুন আইন বাতিল করতে তারা এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। পাঞ্জাব রাজ্যের কৃষকদের নেতৃত্বে এই প্রতিবাদে অনেক শিক্ষিত যুবক-যুবতী রয়েছেন, যা ভারতের বর্ধিত বেকার সমস্যাটিকেও তুলে ধরছে। এ বিষয়ে নতুন দিল্লি থেকে ভয়েস অফ আমেরিকার সংবাদদাতা অঞ্জনা পাসরিচা কিছু প্রতিবাদকারীদের সাথে কথা বলে তার এই প্রতিবেদনে জানাচ্ছেন যে, দিল্লির উপকণ্ঠে রাজপথগুলিতে শিবির স্থাপনকারী কৃষকদের মধ্যে শত শত শিক্ষিত যুবক রয়েছেন, যারা ভারতীয় সাধারণ কৃষকের থেকে একেবারেই আলাদা।

২৭ বছর বয়সী মনভীর সিং

এদের মধ্যে ২৭ বছর বয়সী মনভীর সিং স্নাতক হওয়ার শিক্ষার্থী পাঁচ বছর চাকরির চেষ্টা করে অবশেষে কৃষির কাজকেই জীবিকা হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। পাঞ্জাবের কৃষক মনভীর সিং বলেন, “আমার পড়াশুনার পরে, একটা ভাল চাকরির প্রত্যাশায় ছিলাম এবং অনেক চাকরীর জন্য সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম। তবে আমি এমন কোনও ভাল মাইনের চাকরি আমি পাইনি।"

পাঞ্জাবের উত্তরাংশে যেখানে কৃষকরা খুবই অসন্তুষ্ট এবং যেখানে তাদের আধিপত্য সবচেয়ে বেশী, সেই অঞ্চলেই বিক্ষোভ সবথেকে তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে, যেখানে জাতীয় স্তরে গড়ে বেকারদের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি বেকার রয়েছে, পরিবারগুলির কাছে খামারগুলি প্রধানত কিছুটা সুরক্ষা দিয়ে থাকে। প্রতিবাদকারীরা আশঙ্কা করছেন যে, নতুন আইনগুলি কার্যকরী হলে বেসরকারী ক্রেতা্রা উপকৃত হবেন এবং খামার থেকে পরিবারগুলির যে আয় হয়, তার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

পাঞ্জাবের কৃষক কুলবিন্দর সিংহ

কুলবিন্দর সিংয়ের শিক্ষক হওয়ার আশা হয়তো কখনই সফল হবে না, তবে তার ৭ একরের পারিবারিক খামার আছে বলে তার পক্ষে তার পরিবারকে সমর্থন করা সম্ভব হচ্ছে। পাঞ্জাবের কৃষক কুলবিন্দর সিংহ বলেন, “আমি শিক্ষা বিষয় নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পরে আরও একটি কোর্স করেছিলাম এই আশায় যে, আমি একটা চাকরি পাব। কিন্তু চাকরি নেই। এই প্রথম তরুণরা এতো বিশাল সংখ্যায় এসেছিল। তারা ক্ষুব্ধ, কারণ তাদের ধারণা যে নতুন আইন তাদের সব কিছু ছিনিয়ে নেবে।"

পাঞ্জাবের কৃষক হরদেব সিং

দুই মাস আগে এই বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে, দিল্লি শহরে শীতকালে হরদেব সিং রাতের বেলা ঠাণ্ডার মধ্যে তাঁর ট্র্যাক্টর ট্রাকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে গুটিসুটি মেরে শুয়ে দিন কাটাচ্ছেন। যদিও তার চাকরি রয়েছে, মহামারীটি তাকে নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে। পাঞ্জাবের বাসিন্দা হরদেব সিং বলেন, “যদি আমি আমার চাকরিটি হারাই, তবে কমপক্ষে আমি আমার জমিতে চাষ করতে পারি। আমার যদি সেই সুযোগও না থাকে তবে আমি কী করব? আমি আমার জমি ধরে রাখতে না পারলে আমার কাছে খাবারও থাকবে না, সুতরাং আমরা আমাদের লড়াইটি শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাব। এবং যতক্ষণ না এই আইনগুলি বাতিল হয় আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে এখানে অবস্থান করব।”

এই সপ্তাহে কিছু কৃষক নতুন দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লাটি দখল করে তাদের সহিংস বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এখানকার প্রবীণ এবং তরুণ কৃষকরা তাদের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভের জন্য বাইরে থেকে আগত কিছু অনুপ্রবেশকারীদের দায়ী করেছে এবং তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে শান্তিপূর্ণ অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এই বিশাল প্রতিবাদ ভারতে কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এরকম কর্মসংস্থান তৈরির ব্যর্থতা তুলে ধরেছে, এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যিনি এক বিশাল উন্নয়ন ও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তাঁকে এক বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করি্যে দিয়েছে।

Your browser doesn’t support HTML5

অঞ্জনা পাসরিচার প্রতিবেদন পড়ে শোনাচ্ছেন জয়তী দাশগুপ্ত