পেন্টাগন জানাচ্ছে দায়িত্বে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সদস্যদের বেশ কিছু সংখ্যক কাবুল বিমান বন্দরের বাইরে এক “জটিল আক্রমণে” প্রাণ হারিয়েছেন”। তালিবানের আফগানিস্তান দখলের পর সে দেশ ত্যাগের জন্য সেখানে হাজার হাজার লোক জড়ো হচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সেই এলাকায় দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
একটি গোয়েন্দাসুত্র ভয়েস অফ আমেরিকার কার্লা ব্যাবকে বলেন কমপক্ষে চার জন আমেরিকান প্রাণ হারিয়েছেন । পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কার্বি বলেছেন , “ আরও বেশ কয়েকজন আহতের চিকিত্সা করা হচ্ছে “। তালিবানের একজন মুখপাত্র বলেছেন মোট নিহতের সংখ্যা ১৩ , আহত হয়েছেন ৫২ জন । তিনি এই হামলার নিন্দে করেন।
পেন্টাগন জানিয়েছে, কাবুল বিমানবন্দরের অ্যাবি গেটে বৃহস্পতিবার যে বিস্ফোরণ হয়েছে তা ছিল "একটি জটিল আক্রমণের ফল, যার ফলে বেশ কয়েকজন আমেরিকান ও বেসামরিক লোক আহত হয়েছে।"
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কার্বি টুইটারে লেখেন, "আমরা অ্যাবি গেট থেকে একটু দূরে ব্যারন হোটেলে বা তার কাছে আরও একটি বিস্ফোরণের সংবাদ নিশ্চিত করতে পারছি।"
We can confirm that the explosion at the Abbey Gate was the result of a complex attack that resulted in a number of US & civilian casualties. We can also confirm at least one other explosion at or near the Baron Hotel, a short distance from Abbey Gate. We will continue to update.
— John Kirby (@PentagonPresSec) August 26, 2021
তালিবান মুখপাত্র সুহাইল শাহীন বিস্ফোরণের নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ১৩জন নিহত ও ৫২ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, "আমরা এই ঘৃণ্য ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সবধরনের পদক্ষেপ নেব।"
তালিবান দেশ দখলের পর সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হাজার হাজার মানুষ আফগানিস্তান ছাড়ার চেষ্টা করছে যার পরিপ্রেক্ষিতে বিমানবন্দরে ভিড় বেড়েছে।
তালিবানের উর্ধ্বতন এক সূত্র ভিওএকে নিশ্চিত করেছে যে বিমানবন্দরের বাইরে এমন একটি এলাকায় আত্মঘাতী বোমাবাজ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে যেখানে নারীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিল। বিস্ফোরণের দায় কেউ স্বীকার করেনি।
এর আগে বৃহষ্পতিবার পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলো কাবুলের বিমান বন্দরে সন্ত্রাসী আক্রমণ সতর্ক করে দিয়েছে এবং বলেছে যারা উদ্ধার পাবার আশায় সেখানে সমবেত হয়েছে তারা যেন নিরাপদ স্থানে সরে যায়। কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, “কাবুল বিমান বন্দরের ফটকের বাইরে নিরাপত্তার বিষয়ে হুমকির কারণে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিমান বন্দরের দিকে আসতে নিষেধ করছি এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নির্দিষ্ট কোন প্রতিনিধির কাছ থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বিমান বন্দরের ফটকের কাছেও আসতে নিষেধ করছি”। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ যুক্তরাষ্ট্রের যে সব নাগরিক আবেই গেইট, ইস্ট গেইট এবং নর্থ গেইটে রয়েছেন তারা যেন অবিলম্বে সে সব স্থান ত্যাগ করেন”।
ব্রিটেনের সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রী জেমস হিপে বিবিসি রেডিওকে বলেন, “আসন্ন আক্রমণ সম্পর্কে এখন অত্যন্ত… অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য খবর রয়েছে”। অষ্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বানিজ্য বিভাগও , “অত্যন্ত বড় ধরণের সন্ত্রাসী হামলার চলমান হুমকির কথা উল্লেখ করেছে এবং বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার দি ক্রু বলেন সম্ভাব্য হামলা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সুত্র থেকে জানার পর তার সরকার উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বুধবার এ কথা আবারও বলেন যে আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর তরফ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য হুমকির আশংকা করছে। পররাষ্ট্র দপ্তরে ব্লিংকেন বলেন , “এই জটিলতা এবং এই প্রচেষ্টার পেছনে যে বিপদ রয়েছে তাকে বাড়িয়ে বলা যায় না”। তিনি বলেন, “আমরা তালিবান নিয়ন্ত্রিত শহরে এবং দেশে এক বৈরি পরিবেশে কাজ করছি যেখানে আইসিস-কে’র আক্রমণের বাস্তব আশংকা রয়েছে। আমরা সব ধরণের সাধানতা অবলম্বন করছি, তবে এটা অত্যন্ত ঝুঁকির বিষয়”।
যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকানদের , যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাশিন্দাদের , মিত্রদের এবং ঝুঁকির মুখে পড়া অন্যান্য আফগানদের উদ্ধার করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় প্রকাশ করেছে এবং তার জন্য প্রয়োজনবোধে এ মাসের শেষে সময়সীমা যদি অতিক্রম করে তা হ’লে তাই করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ব্লিংকেন বলেন, “৩১ শে আগস্টের পরও আমেরিকানদের ফিরিয়ে আনা এবং যে সব আফগান সে দেশ ত্যাগ করতে চায়, তাদের জন্য কোন সময়সীমা নেই। তাদেরকে ভুলে যাওয়া হবে না”।
বুধবার হোয়াইট হাউজ বলেছে যে ১৪ই আগস্টের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক এবং সংযুক্ত ফ্লাইটগুলোতে ৮২.৩০০ জনকে হয় উদ্ধার করেছে নয়ত উদ্ধার পেতে সহায়তা করেছে।