বাংলাদেশ বিষয়ে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সেমিনার

Seminar at Heritage Foundation

যুক্তরাষ্ট্রের থিংক-ট্যাংক প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বুধবার ওয়াশিংটনস্থ ফাউন্ডেশনের লাহরম্যান অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশের সমৃদ্ধতর ভবিষ্যৎ শীর্ষক, এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অর্থনীতি, এবং রাজনীতি ও নিরাপত্তা, বিষয়ে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনকালে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের বলেন
একাত্তুরে মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পর নানা কারনে বারবার হোচট খেতে হয়েছে, কিন্তু তার পরও অল্প সময়ে দেশটির আর্জন কম নয়।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য নিধার্রণ করে দেয়া ১১টি সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষমাত্রার মধ্যে দুই বছর বাকী থাকতেই বাংলাদেশ ৯টি লক্ষমাত্রা বাস্তবায়ন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে “দারিদ্র নিরসন, লিঙ্গ বৈষম্য কমানো, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার হার বৃদ্ধি, মানুষের গড় বয়স সীমা বৃদ্ধি, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, নারী শিক্ষার দ্বিগুন হওয়া, এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড় পড়তায় বছরে ৫ শতাংশেরও বেশী হওয়া”।

রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের



অন্যান্য খাতের ন্যায় ব্যবসা বানিজ্যে, বিশেষ করে পোষাক খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে অনুকরণীয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, তাজিন ও রানা প্লাজায় দুর্ঘটনা এই খাতকেই শুধু নয়, পুরো বাংলাদেশকে সতর্ক করে দিয়েছে। ফলে কারখানা ও শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে চলমান অচলাবস্থা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বাধীনতার পর নানা কারনে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থিতি আসেনি। ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, সেনা হস্তক্ষেপ, স্বঘোষিত খুনীদেরকে পুরস্কৃত করা,৭১এর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামাত ইসলামকে ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন কারনে রাজনীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি; নিরাপত্তা আসেনি রাজনীতিতে। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিপুল জনভোটে নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে নানা অর্জনে সমর্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, যে যাই বলুক আগামী নির্বাচন হবে সংসদীয় পদ্ধতিতেই, আর তা যে অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে তার প্রমান সাম্প্রতিককালে অনুষ্ঠিত ৪টি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন।

দুই পর্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারের দ্বিতীয় পর্বে রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্যানেল সভায় বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বিষয়ক বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিন ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এলিসা আয়ার্স যুক্তরাস্ট্র বাংলাদেশ সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরেন, নানা ক্ষেত্রে দেশটির অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ও জিএসপি নিয়ে কথা বলেন।


ড, এলিসা বলেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিতব্য নিবর্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য করতে সকল দলের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসা উচিৎ। যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে সকল দলের সাথে আলোচনা করছে, তাবে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে”।

বাতিলকৃত জেনারালাইজড সিস্টেম প্রেফারেন্স জিএসপি পুন:প্রবর্তনের ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমরা জিএসপি পুন প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করার লক্ষ্যে, বাংলাদেশে শ্রমিক এবং কারখানা নিরাপত্তা জোরদার, ও নিশ্চিত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলকে সেইভাবে কাজ যাওয়ার আহবান জানাই”।


এ অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে ইলিনয় ষ্টেট ইউনিভির্সটির ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিক্স এ্যান্ড গভর্নমেন্টের চেয়ার ড. আলী রিয়াজ বাংলাদেশের রাজনীতি আর ধর্মের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন ইসলাম নিয়ে রাজনীতি আগেও ছিল। তবে সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে গঠিত শাহবাগে তরূণদের সংগঠণ গনজাগরন মঞ্চকে প্রতিহত করতে, কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক দল হেফাজতে ইসলাম সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। আসলে তারা জামাতে ইসলামীর পরোক্ষ সহযোগিতায় সামনে এসেছে মূলত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায়। তিনি বলেন, তারা আন্দোলনে নেমেছে, জামাত নেতাদের বিচার হচ্ছে ইসলামী রাজনীতি করার কারনে এই ধরনের ভুল ব্যখ্যায় উদ্বুদ্ধ হয়ে।

ড. আলী রিয়াজ বলেন, “একাত্তুরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কারনে জামাত নেতাদের বিচার হবে। বুঝতে হবে যে তাদের বিচার হচ্ছে ইসলামী রাজনীতি করার কারনে নয়”।

এ পর্বে আরো বক্তব্য রাখেন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো লিসা কার্টিজ ও হাডসন ইনষ্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো এবং দৈনিক ইত্তেফাকের পরিচালক মানিজা হোসেইন।

এর আগে সেমিনারের প্রথম পর্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিষয় নিয়ে, হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের এশিয়ান ষ্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক ওয়াল্টার লোহম্যানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন প্রেইরী ভিউ এ এ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ও কলেজ অব বিজনেসের ডীন ড. মুনীর কুদ্দুস, গ্লোবাল ওয়ার্কস ফাউন্ডেশনের পরিচালক এডওয়ার্ড গ্রেসার এবং ইউএস বাংলাদেশ এ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক শামারুখ মহিউদ্দিন।

এ পর্বে বাংলাদেশের তৈরী পেষাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

সেমিনার শেষে রাষ্ট্রদূত কাদের এ সেমিনার কতোটা উপকারে আসবে সে সম্পর্কে তাঁর মন্তব্যে বলেন, “আজকের সেমিনার খুব ভাল হয়েছে। এখানে ইতিবাচক নেতিবাচক সব দিকই উঠে এসেছে। সব মিলে এটা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ন। কেয়ারটেকার ইসূ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে এটা যেহেতেু বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন ব্যপার তাই তারাই এর সমাধান করে সিদ্ধান্তে আসবে।”

Your browser doesn’t support HTML5

হেরিটেজ ফাউনডেশানের সেমিনার বিষয়ে রিপোর্ট