ভারতের অযোধ্যায় হিন্দু-মন্দির নির্মাণের পক্ষেই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট

আজ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তার দেয়া রায়ে , অযোধ্যায় বিতর্কিত জমির মালিকানা হিন্দুদের দিয়েছে যার ফলে উত্তর ভারতের অযোধ্যা শহরে মন্দির নির্মাণ সম্ভব হবে । সেখানেই ২৫ বছর আগে ১৬ শতকের একটি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয়।

২.৭৭ একর জমির মালিকানা নিয়ে কয়েক দশক ধরে চলে আসা বিবাদ , ১৯৯২ সালে মারাত্মক আকার ধারণ করে যখন মসজিদটি ভেঙ্গে দেয়ার ফলে, ভারতে হিন্দু মুসলমন দাঙ্গা বাধে যাতে প্রায় দু হাজার লোক প্রাণ হারান।

আজ দেয়া এই রায় অনুযায়ী এই জমি একটি ট্রাস্টকে দেয়া হবে যাদের তত্বাবধানে হিন্দু মন্দির নির্মাণ করা হবে।

এই রায় ঘোষণার পর হিন্দু ও মুসলিম নেতারা শান্তি ও সৌহার্দ্যের আবেদনের পুনরাবৃত্তি করেন।

হিন্দুরা মনে করেন যে এই বিতর্কিত ভূমিতেই তাদের দেবতা রামের জন্ম হয়েছিল এবং হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবেশেষের উপর মসজিদটি নির্মিত হয়।

মুসলমানদের পক্ষে এই মামলার আইনজীবি জাফারইয়াব জিলানি বলেন যে তাঁরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নন তবে তিনি শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান।

গোটা দেশ জুড়েই এবং বিশেষত অযোধ্যায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরালো ছিল । অযোধ্যায় পাঁচ হাজার পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনী টহল দিচ্ছে এবং সব রকমের মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সকলকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং টুইট বার্তায় বলেছেন যে এই রায় কারও জয় কিংবা পরাজয় হিসেবে দেখা উচিৎ নয়।

তিনি বলেন আমি আমার দেশবাসীর প্রতি আবেদন জানাচ্ছি যে সকলের জন্য এটা লক্ষ্য করার বিষয় যে এই রায় ভারতের শান্তি , একতা এবং সদিচ্ছার মহান ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করেছে।

Your browser doesn’t support HTML5

কলকাতা থেকে দীপঙ্কর চক্রবর্তীর রিপোর্ট

এই রায় নিয়ে ভারতবাসীর বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গবাসীর প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেছেন পরমাশিষ ঘোষ রায়।

Your browser doesn’t support HTML5

কলকাতা থেকে পরমাশিষ ঘোষ রায়ের রিপোর্ট।

সম্রাট বাবরের জমানায় নির্মিত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার রায়ে বাংলাদেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সরকার বলছে এখনই কোন প্রতিক্রিয়া জানাবে না। বিরোধী বিএনপি কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ১৯৯২ সনের ৬ই ডিসেম্বর যখন মসজিদটি ভাঙ্গা হয় তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। চরম উত্তেজনার মধ্যেও সেদিন সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল বাংলাদেশ।

হেফাজতে ইসলাম বলেছে এই রায়ে তারা মর্মাহত, ক্ষুব্ধ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবশ্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই বেশি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, এই মুহূর্তে রায়ের ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, তবে পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নজর রাখবে বাংলাদেশ। আমাদের লিগ্যাল টিম তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে।


হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেছেন, এই রায় তারা পর্যালোচনা করছেন। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে আমরা হতাশ, মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ভারতের দু’একটা প্রতিষ্ঠান ছিল গর্ব করার মতো। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুপ্রিমকোর্ট। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী শাসনামলের চেতনা যে এ আদালতকেও গ্রাস করেছে তার প্রমাণ মেলে বাবরি মসজিদ সংক্রান্ত রায়। তবে এ রায় আমাদের যতো কষ্ট দিক না কেন, মনে রাখতে হবে যে এর সাথে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর কোন রকম সম্পর্ক নেই।

Your browser doesn’t support HTML5

ঢাকা থেকে মতিউর রহমান চৌধুরীর রিপোর্ট