ভারতের আপামর জনসাধারণের ভেতরে চীন বিরোধী মনোভাব দেখা দিয়েছে

লাদাখের কাছে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের আপামর জনসাধারণের ভেতরে চিন বিরোধী মনোভাব দেখা দিয়েছে। চীনে উৎপাদিত জিনিসপত্র বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ ভারতের রেলমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, চারশো কিলোমিটার রেললাইনের সিগনাল ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের জন্য চীনা একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে যে বরাত দেওয়া হয়েছিল তা ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে‌। ২০১৬ সালে সই করা ওই চুক্তি অনুযায়ী কুড়ি শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে, কিন্তু ভারত আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছিল যে কাজ বড়ো ঢিমেতালে চলছে। এখন সীমান্ত সংঘর্ষের পটভূমিতে ওই চুক্তি ফিরিয়ে নেওয়া হলো বলে রেলমন্ত্রী পীযুষ গয়াল আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যে ভারতের সরকারি টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল-এর ফোরজি প্রযুক্তির জন্য যে চীনা যন্ত্রাংশ আমদানি করার কথা ছিল, আজ তা-ও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। দেশের বহু জায়গাতেই এখন চীনা দ্রব্য বয়কটের ডাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে বহু চীনা জিনিসপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভারতের ব্যবসায়ী সংস্থার সংগঠন ৫০০টি জিনিসের নাম করেছে যেগুলো আপাতত বন্ধ করা যায়। এই সব ক'টি চীনে উৎপাদিত দ্রব্য। বলা হয়েছে, ভারতে উৎপাদিত দ্রব্য ব্যবহার করার দিকে ঝোঁক দিতে হবে। তাতে সাময়িকভাবে কিছু হয়তো অসুবিধা হবে, কিছু ক্ষতি হবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারত আত্মনির্ভর তো হবেই, চীনের আগ্রাসী ভূমিকা থেকেও রক্ষা পাবে। ইতিমধ্যে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ৫২টি অ্যাপ ব্যবহার করতে বারণ করে দিয়ে বলেছে, চীনের ওই অ্যাপগুলো থেকে অনেকের মোবাইলে যে সমস্ত তথ্য আছে সেগুলো চুরি যেতে পারে। তবে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আজ চীনা রেস্তোরাঁ আর চীনা খাবার বয়কটের ডাক দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবল হাসিঠাট্টার খোরাক জুগিয়েছেন। কারণ ভারতে কেন, কোনও দেশেই চীনা রেস্তোরাঁর মালিকানা চীনের হাতে নেই, আর চিনা খাবার তো এক এক অঞ্চলে এক এক স্বাদের। তার সঙ্গেও চীনের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে, সব মিলিয়ে ভারতে যে চীন বিরোধী মনোভাব গড়ে উঠেছে, তাতে ভারতে বসবাসকারী চীনা নাগরিকরা যথেষ্ট শঙ্কিত বোধ করছেন। এ দেশে এখন প্রায় তিন হাজার চীনা নাগরিক নানারকম চীনা সংস্থায় কর্মরত রয়েছেন। তাঁদের পরিবার-পরিজনসহ তাঁরা ভারতে রয়েছেন।‌ এঁরা এখন অনেকেই বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন এবং সব সময় একটা আশংকার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তা ছাড়াও এমনিতেই ভারতে সাধারণ মানুষজনের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষদের বিরুদ্ধে একটা ঘৃণার মনোভাব রয়েছে। কারণ সাধারণ অর্ধ শিক্ষিত জনসাধারণ মনে করে, এঁরা দেখতে চীনাদের মতো, তাই এঁদের চীনে চলে যাওয়াই উচিত। এইভাবে উত্তর পূর্বাঞ্চলের মানুষদের আলাদা করে দেওয়ার প্রবণতা বহু কাল ধরে চলে আসছে। যদি এটা আরও বাড়ে তা হলে উত্তর-পূর্বের মানুষরা ভারতের অন্যান্য জায়গায় আরও নিরাপত্তার অভাব বোধ করবেন। সবমিলিয়ে বিষয়টা সমাজবিজ্ঞানীদের যথেষ্ট চিন্তায় ফেলেছে।

দীপংকর চক্রবর্তী, ভয়েস অফ আমেরিকা, কলকাতা

Your browser doesn’t support HTML5

ভারতের আপামর জনসাধারণের ভেতরে চীন বিরোধী মনোভাব দেখা দিয়েছে