কারাগারে শেক্সপিয়ারের সঙ্গে ম্যান্ডেলা

প্রথমবারের ন্যায় যুক্তরাষ্ট্রে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের রচনাবলীর একটি অনুলিপির প্রদর্শনী চলছে যার পেছনের ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী। এই রচনার একটি অধ্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস এবং বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রামের কথা উঠে এসেছে, উঠে এসেছে নেলসন ম্যান্ডেলাসহ যাদেরকে রোবেন দ্বীপে কারাবন্দী করা হয়েছিল তাঁদের কথা। এ নিয়ে রিপোর্ট করেছেন ভয়েস অব আমেরিকার সুজানে প্রেস্তো Suzanne Presto । পরিবেশন করছেন সেলিম হোসেইন।

Your browser doesn’t support HTML5

ম্যান্ডেলা রিপোর্ট

শেক্সপিয়ারের সম্পূর্ন কাজের বাঁধাই করা অনুলিপিটি, দক্ষিন আফ্রিকার রাজবন্দী রাখার কারাগার, রোব্বেন আইল্যান্ড শেক্সপিয়ার নামে পরিচিত।

ওয়াশিংটনের ফোলজার শেক্সপিয়র লাইব্রেরী Folger Shakespeare Library, যেখানে ঐ বইটির প্রদর্শনী চলছে, তার পরিচালক মাইকেল উইটমোর Michael Witmore জানালেন, “সনি ভেংকাট্রাথনাম নামে কারাবন্দীদের একজনের কাছে একটি বই ছিল; শেক্সপিয়ারের একটি অনুলিপি-এবং সেটা সে রাখতে পারবে কিনা সে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল”।

১৯৭০ সালের দিকে রোবেন দ্বীপ কারাগারের বন্দী ভেংকাট্রাথনাম বইটির আসল মোড়ক লুকানোর জন্য মোড়কের ওপর হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন প্রতীক সম্বলিত উজ্জ্বল রঙ্গের কার্ড দিয়ে ঢেকে দেন। তখন তিনি কারা রক্ষীদের বলতেন এটি একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ।

উইটমোর বলেন, “ফলে তিনি বইটি রাখার অনুমতি পান এবং কারাগারে তার সতীর্থ বন্দীদেরকে তা পড়তে দিয়ে বলেন খুজে দ্যাখো, এই বইয়ের কোথাও শেক্সপিয়ার আমাদের কথা বলেছেন”।

ঐ কারাবন্দীদের একজন ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। জুলিয়াস সিজার কবিতার পাশে ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে নীল কালি দিয়ে করা ম্যান্ডেলার স্বাক্ষর রয়েছে।
কবিতাটি হচ্ছে:

“কাপুরুষ মৃত্যুর আগে মরে বহুবার।
মরেনা বীর কখনোই শুধু মরে একবার।
যতো আশ্চর্য্য এ যাবৎ শুনেছি আমি;
সবচেয়ে আশ্চর্য আমার কাছে
ভীত হওয়া পুরুষের বারবার মৃত্যু; অথচ
তা এমনই যা আসবেই যখন প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, মিষ্টার ম্যান্ডেলা এই বাক্য কটি ২০০০ সালের জুলাই মাসে দক্ষিন আফ্রিকার ডারবানে আন্তর্জাতিক এইডস সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে আউড়েছিলেন।

উইটমোর বলেন, একজন শেক্সপিয়ার বিশেষজ্ঞের মতে, শেক্সপিয়ারের সঙ্গে পাঠকদের সংযোগ অত্যন্ত গভীর ব্যক্তিগত। ফলে ঐ কবিতাটির স্বর্গীয় আবেদন ম্যান্ডেলাকে আন্দোলিত করেছে।

তিনি বলেন, “আমরা যারা এই রচনাটি পড়ি, ঐ কবিতাটির কথা চিন্তা করুন যা সুখ দু:খ নির্বিশেষে ঔদাসিন্যের একটি উদাহরণ”। এটি একটি দর্শন যা রেনেসাতেঁ ছিল, এবং আমার ধারণা রয়েছে ম্যান্ডেলার মধ্যেও। ভয়ে নি:সাড় হওয়া ঠিক নয়; যুক্তি ব্যবহারকরে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ন কাজ সম্পন্ন করা উচিৎ এবং তাতে ভয়ওকেটে যায”।

বইটিতে ৩৪ জন কারাবন্দী যার যার পছন্দের রচনার পাশে তাঁদের নাম এবং স্বাক্ষর দিয়েছেন। ভেংকাট্রাথনাম স্বাক্ষর করেছেন টাইটেল পৃষ্ঠায়। আরেকজন একটি বাক্য পছন্দ করেছেন দা টেম্পেষ্ট The Tempest থেকে যেখানে নিজের ভুমি থেকে উচ্ছেদ হবার কথা আছে। অন্যেরা স্বাক্ষর করেছন এ মিডসামার নাইটস ড্রিম (A Midsummer Night's Dream) এ উল্লেখিত পু’কের দুর্বল মনের বক্তৃতার পাশে।
উইটমোর বলেন বইয়ের লেখা এবং লেখকের মনের কথা আজও সঙ্গতিপূর্ন। “আমার মনে হয় এটিই হল এই গল্পে আমার পছন্দের বিষয়। এখানে আছে আমার বসতি থেকে বহু দূরে, এক্কবারে ভিন্ন যায়গার কথা, আমি বুঝতে পারি হয়ত, তা কেমন ছিল, হয়ত অল্পই বুঝি; এজন্যই মানুষ বইটি নেয় এবং বলে এখানে এমন কিছু আছে যা আমি স্মরনে রাখতে চাই”।

পদর্শনীতে আরো রয়েছে ম্যান্ডেলার রবেন দ্বীপের জেলখানায় ১৮ বছরের জীবনের নানা দিক তুলে ধরে আঁকা ছবি, যা তিনি শুরু করেন এক দশক আগে। ছবিতে কালো, বেগুনী, নীল, হলুদ, সবুজ,নানা রং ব্যবহার করে রবেন দ্বীপ, জেলখানার প্রকোষ্ঠ, কারাবন্দীদের ঢোকার অনুমতি না থাকা জেলখানার গীর্জা’র অবয়ব তুলে ধরেন।

ছবির পাশে একটি প্ল্যাকার্ডে মিষ্টার ম্যান্ডেলাকে উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা হয়েছে কারাগারের অন্ধকার থেকে বাইরে আসা একটি আলো এ্যাতোই উজ্জ্বল যে তাকে কারাগারের দেয়ালের পেছনে লুকানো যায়নি।

সেপ্ম্বের জুড়েই Folger Shakespeare Library তে চলবে রবেন আইল্যান্ড প্রদর্শনী। বইটি এখনো সনি ভেংকাট্রাথনাম এর সম্পত্তি।