আত্মঘাতি হামলা ঠেকিয়ে কয়েক’শ জীবন বাচালেন পাকিস্তানের স্কুল ছাত্র

সম্প্রতি পাকিস্তানের শিয়া অধ্যুষিত খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের একটি স্কুলে ১৫ বছর বয়সী স্কুল ছাত্র আইতজাজ হাসান নিজের জীবনের বিনিময়ে এক আত্মঘাতি বোমারুর বোমা হামলার পরিকল্পনা ঠেকিয়ে কয়েক’শ ছেলেমেয়ের জীবন বাচান। আর তাঁকে বীরের মর্যাদা দিয়ে চির স্মরণীয় করে রাখতে তাঁর নামে একটি স্কুল ও একটি ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান করার পরিকল্পনা ঘোষণা করল পাকিস্তানী কতৃপক্ষ। এ নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদন শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন:

Your browser doesn’t support HTML5

সম্প্রতি পাকিস্তানের শিয়া অধ্যুষিত খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের একটি স্কুলে ১৫ বছর বয়সী স্কুল ছাত্র আ


খাইবার পাখতুনখাওয়ার প্রাদেশিক গভর্নর শাওকাতুল্লাহ খান ছেলেটির বাড়ীতে গিয়ে তাঁর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তাঁর পরিবারের জন্য ৫০ লক্ষ রুপি বা ৪৭ হাজার ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

গভর্ণর খান ভয়েস অব আমেরিকাকে জানান আইতজাজের ন্যায় বীর ছেলেমেয়েদের এমন বিসর্জন আমাদের জাতীয় গর্ব এবং তাঁর গ্রামের জন্য বিশাল সম্মান। তিনি বলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে তিনি তাঁর বাড়ীতে যান।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ঘোষণা দেন আইতজাজ হাসানকে সাহসীকতার জন্য দেশের সবোর্চ্চ পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। এই পুরস্কারের জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেইনের অনুমোদন কামনা করেন। ২৩শে মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে পুরস্কারটি ছেলেটির পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে।

আইতজাজ হাসান স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্র ছিল। পুলিশ জানায় সে বোমা হামলাকারীকে স্কুলের পোষাক পরে ঢুকতে দেখেই সন্দেহ করে এবং তাকে থামানোর চেষ্টা করে। এবং তখনই বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। হামলাকারি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আর আইতজাজ মারা যায় হাসপাতালে নেয়ার পর।

আত্মঘাতি বোমা হামলাকারী সম্পর্কে আইতজাজের মনেকি ছিল তা বলতে গিয়ে তার বড় ভাই মুজতবা’র মন্তব্য তুলে ধরে এই রিপোর্টটির প্রতিবেদক জেরিলিন ওয়াটসন বলেন,

“ওয়াটসন বলছিলেন, তার ভাই সর্বদাই বলত যদি কখনো কোনো আত্মঘাতি বোমা হামলাকারি তার সামনে পড়ে, তবে সে তার সঙ্গে লড়বে। মুজতবা আরো বললেন, সে আসলে তাই করেছে যা সে করতে চেয়েছিল”।

আইজাজের বাবা বললেন, এখন অবিরাম কেঁদে চলছে তার মা। কিন্তু সেদিন যদি সে তা না করতো তবে আজ আরো ৫০০ মায়ের কান্না শুনতে হতো।

পাকিস্তানী শিক্ষাকর্মী মালালা ইউসুফজাই আইতজাজ হাসানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বৃটেনে বসবাসরত মালালা ইউসুফজাইয়ের মন্তব্য তুলে ধরে প্রতিবেদক ওয়াটসন বলেন,

“মালালা বলেছেন, আমি গর্বিত যে আমি এমন একটি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী যেখানে আইতজাজ হাসানের ন্যায় বহু সাহসী বীরের জন্ম হয়”।

১৬ বছর বয়সী মালালা ইউসুফজাই ২০১২ সালে তার ওপর হামলা’র পর মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে জিতে যান। পাকিস্তানী তালিবান অস্ত্রধারীরা খাইবার পাখতুন খাওয়া প্রদেশের সোয়াত জেলায় তার ওপর হামলা চালিয়েছিল। মালালা তার সাহসীকতার জন্য বিশ্বব্যাপী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

গতবছর অক্টোবরে প্রকাশিতহয় তার বই, ‘আই এ্যাম মালালা’ যা আন্তর্জাতিকভাবে সর্বোচ্চ বিক্রিত বইয়ে পরিণত হয়। তবে পাকিস্তানের প্রাইভেট স্কুলগুলোতে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বইটি নিষিদ্ধ করা হয়।