ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারোন ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন

ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারোন ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। কয়েক দফা স্ট্রোকের পর ২০০৬ সাল থেকে তিনি কোমায় ছিলেন। ভয়েস অব আমেরিকার জেরুজালেম সংবাদদাতা লুইস রামিরেজের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শ্যারনের জীবনী। পরিবেশন করছেন রোকেয়া হায়দার:

Your browser doesn’t support HTML5

ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারোন বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। কয়েক দফা স্ট্রোকের পর ২০০৬ সা


যোদ্ধা থেকে ইসরাইলের দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক হন এরিয়েল শ্যারোন।

ইসরাইল রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর কয়েক দশক, বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের ইয়ম কিপুর যুদ্ধে, যুদ্ধক্ষেত্রের একজন যোদ্ধা হিসাবে তিনি তার সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী ও কৌশলী পন্থায় তিনি সুয়েজ খাল দিয়ে মিশরীয় সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে ইসরাইলী সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেন।

অনেকের কাছেই তিনি বিধ্ধংসী ও নৃশংস বলে পরিচিত ছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি লেবাননে একটি অভিযানের নেতৃত্ব দেন যার ফলে সাব্রায় শত শত ফিলিস্তিনি এবং বৈরুতের শাতিলা শরনার্থী শিবিরে লেবানী জঙ্গীরা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

সাবেক যুক্তরাস্ট্র-মধ্যপ্রাচ্য আলোচক ডেনিস রস বলেন সেনাবাহিনীই শ্যারনকে গড়েছিল।

“তিনি বিশ্বাস করতেন যে, শান্তি স্থাপনের একমাত্র পথ হচ্ছে ইসরাইলের শক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা”।

রাজনীতিবিদ হিসাবেও এরিয়েল শ্যারোন ছিলেন বিতর্কিত। বেশ কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে মন্ত্রী পরিষদ সদস্য হিসাবে তিনি ফিলিস্তিনি সীমান্তে ইহুদী বসতি স্থাপন জোরদার করার কাজ করেছেন।

ফিলিস্তিনি বুদ্ধিজীবি শুখরি আবেদ বলেন এই কারনে আরবীয়দের কাছে তিনি চরম বিদ্বেষের পাত্র হন।

“নিদেন পক্ষে বলতে গেলে তার ওপর বিশ্বাস ছিল না এবং সম্ভবত তাদের অনেকের কাছেই তিনি বিদ্বেষের পাত্র ছিলেন; কারন বসতি স্থাপনে তার শক্ত অবস্থান, এবং ভবন নির্মান। তিনি ছিলেন বসতি স্থাপনের প্রবর্তক”।

২০০০ সালে বিরোধীদলের প্রধান হিসাবে জেরুজালেমের হারাম-আল-শরীফ বা টেম্পল মাউন্ট সফরের কারনে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটে এবং তার ফলেই দ্বিতীয় ইন্তিফাদা নামের বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটে।

২০০১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।

কয়েক বছরের মধ্যে তার সরকার সেই বিপ্লবের অবসান ঘটান এবং নিরাপত্তা বাধার কাজ শুরু করেন যা বর্তমানে ইসরাইলকে ফিলিস্তিন থেকে আলাদা করেছে।

নিজের দেশের জনগনের প্রতিরক্ষায় কোন পদক্ষেপ না নেয়া, এরিয়েল শ্যারোনকে যখন কড়া নেতা হিসাবে স্মরণ করা হয়, ঠিক তখনই আবার বলা হয় যে তিনি শান্তির জন্য কঠিন পদক্ষেপ নিতে পারতেন।

২০০৫ সালে তিনি ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের আশায় গাজা’ থেকে ইসরাইলকে প্রত্যাহার করার বিষয়টি দেখভাল করেন, ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী এবং সেনাসদস্যদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে এনে।

২০০৫ সালের আগষ্টে হিব্রু ভাষায় করা মন্তব্যে শ্যারোন বলেন, তাদেরকে সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসন করা হচ্ছে, নিরাপত্তা সীমানা নির্দিষ্ট করার জন্য যা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের পৃথক করবে।

মিষ্টার শ্যারোন কাদিমা পার্টি করার লক্ষ্যে হাওকিশ লিকুদ পার্টি ত্যাগ করেন। আলাদা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে তিনি বেশ শক্তভাবে ফিলিস্তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠায় আলোচনা শুরু করেও ব্যার্থ হন।

২০০৬ সালে মিষ্টার শ্যারোন কয়েক দফা স্ট্রোকে আক্রান্ত হন এবং কোমায় চলে যান। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এহুদ ওলমার্ট তার স্থলাভিষিক্ত হন।

দক্ষিন ইসরাইলে তার বাসভবনে স্থানাস্তরের আগের কয়েক বছর সাবেক প্রধামন্ত্রী তেল আভিভের কাছে একটি হাসপাতালে কাটান।

এরিয়েল শ্যারোন তার জীবন কাটিয়েছেন শক্তিশালী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেকে ব্যাপৃত করে। তার শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা, প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে রেখেছে।