শীতকালীন অলিম্পিকে অংশ নিতে ক্রীড়াবিদরা রাশিয়ার সোচিতে যাচ্ছেন

২২তম শীতকালীন অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার জন্যে সারা পৃথিবী থেকে ক্রীড়াবিদরা রাশিয়ার সোচিতে যাচ্ছেন। অলিম্পিকে তাদের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। এই প্রতিযোগীতার ১৫টি খেলার ৯টিই অনুষ্ঠিত হবে আউটডোরে, যেখানে পাহাড়িয়া ঢলে তুষার বা বরফ প্রয়োজন। একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, উষ্ণতর পৃথিবী কিভাবে, আগের অলিম্পিক অনুষ্ঠান প্রভাবিত করেছে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে, শীতকালীন অলিম্পিকের সামনে কি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এ সম্পর্কে ভয়েস অফ আমেরিকার রোজেন স্কার্বলের প্রতিবেদন।

শীতকালীন অলিম্পিকের শুরু ১৯২৪ সালে। সেই থেকে ১৯টি শহর শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজন করেছে। ড্যানিয়েল স্কট, ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী। তিনি সেই ১৯টি শহরের আবহাওয়ার তুলনা করেছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে, যে জায়গাগুলো দীর্ঘদিন ধরে শীতকালীন ক্রীড়ার গন্তব্যস্থল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল সে জায়গাগুলো এখনও তার উপযোগী আছে কিনা।

ড্যানিয়েল স্কট বলছেন, জলবায়ুর মডেল এবং ঐতিহাসিক রেকর্ড বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঐ ১৯টি শহরই অদূর ভবিষ্যতে অলিম্পিকের আয়োজক হতে পারে। অবশ্য, এই গবেষণায় আরো কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এই শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ ১৯টি শহরের মধ্যে মাত্র ১০ বা ১১ টি শহরের আবহাওয়া শীতকালীন অলিম্পিকের উপযোগী থাকবে। আর শতাব্দীর শেষের দিকে গিয়ে মাত্র ৬টি শহরের আবহাওয়া থাকবে অনুকুল।

শীতকালীন গেমসের জন্যে, এমন ঠান্ডা আবহাওয়া প্রয়োজন যেখানে বরফ তৈরি হবে এবং সেই বরফ গলে যাবে না। ১৯৮০র দশকের গোড়ার দিকে, আয়োজক শহরগুলো তা নিশ্চিত করার জন্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারা কৃত্রিমভাবে বরফ এবং রেফ্রিজারেটেড ট্র্যাক তৈরি করেছে।

১৯৫০ সাল থেকে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। যানবাহন, বিদ্যুত কেন্দ্র এবং কলকারখানা থেকে নির্গত কার্বন জলবায়ুকে ক্রমান্বয়ে উষ্ণ করে তুলছে। এমনকি ২০১০ সালে অলিম্পিকের মাত্র এক সপ্তাহ আগে, ভ্যানকুভার শহরে আঘাত হানে উষ্ণপ্রবাহ।

জানুয়ারিতে উত্তর ভ্যানকুভারে, যে বরফ ছিল তা গলে যায়। এবং তাপমাত্রা এত বেশি ছিল যে নতুন করে বরফ তৈরি করা যাচ্ছিল না। পরে তাদের খড়ের গাদা নিয়ে আসতে হলো। এবং সেই খড়ের গাদাই তারা বরফ দিয়ে ঢেকে কাজ সারল। কয়েকটি বিশেষ ধরনের খেলার জন্যে সেটাই যথেষ্ট ছিল।

সোচির অবস্থান সমুদ্রের ধারে। শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজকদের মধ্যে সোচিই উষ্ণতম শহর। সোচির গড় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আউটডোর ইভেন্টসগুলো অনুষ্ঠিত হবে, সোচি থেকে অনেক দূরে।

মিঃ স্কট বলছেন, ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির এবার নতুন নতুন এলাকা বিবেচনা করা উচিত। যেমন উত্তর চীনের মত জায়গা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ ওপরে হওয়ার কারণে, খুব সহজেই সেখানে স্কি প্রতিযোগীতা আয়োজন করা সম্ভব।

ভবিষ্যতে, সিয়াটল বা সল্টলেক সিটি আবারও অলিম্পিক আয়োজন করতে পারে। বড় কোন শহর অলিম্পিক মূল আয়োজক হতে পারে আর দ্বিতীয় কোন এলাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে স্কিইয়িং-এর মত প্রতিযোগীতা। যাতে আবহাওয়ার কারণে কোন কিছু বিঘ্নিত না হয়।

মিঃ স্কট মনে করেন, তার প্রতিবেদন আগামীতে অলিম্পিক আয়োজনে যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হতে হবে, সেগুলোর ওপরই আলোকপাত করেছে। কিন্তু, যারা শখের বশে শীতকালীন স্পোর্টসে অংশ নেয় তাদের গন্তব্যের সংখ্যাও দিন দিন কমে আসছে। যদি জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে জ়োরালো পদক্ষেপ নেওয়া না যায় তাহলে, শীতকালীন ক্রীড়ার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।