ভয়েস অফ আমেরিকার নারী পথপ্রদর্শকদের দুঃসাধ্য স্তম্ভ অতিক্রম করে ওপরে ওঠার গল্প

All Stars Women

নারীদের ইতিহাসের মাস উদজাপন হিসেবে সেদিন ভয়েস অফ আমেরিকাতে পালিত হল কয়েকজন নক্ষত্রদের নিয়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠান। সেখানে এই কিংবদন্তী নারীরা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন তাদের ভয়েস অফ আমেরিকার যাত্রা, তাদের অভিজ্ঞতা, এবং পরামর্শ দিলেন অনুজদের।

অতিথি বক্তা ছিলেন এফ বি অ্যাই এর ডাইভারসিটি ও ইনক্লুসান বিভাগের প্রধান টোনিয়া ওডোম।বলছিলেন তিনি সবসময় ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছেন। আইন নিয়ে পড়াশুনা করে আইনজ্ঞ হবার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।

বলছিলেন,তিনি ফউজাদারি আইনজীবী হতে চাননি।সমঅধিকার নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তবে তাতে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। ল স্কুল থেকে পাস করার পর তার কখনোই ইচ্ছে ছিলোনা এফ বি অ্যাই তে কাজ করার কিন্তু ভাগ্য টাকে ঠিকই নিয়ে গেছে সেই পথে। ডাইভারসিটি বা বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে তার ছিল সব সময় এবং এফ বি অ্যাইতে তিনি সেই সুযোগ পেয়ে গেলেন। তার বাবা মা ছিলেন কূটনীতিক এবং এই সুবাদে তিনি পেয়েছেন ভিন্নতার স্বাদ। ঘুরেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিশেছেন নানা দেশের মানুষের সঙ্গে জেনেছেন নানা সংস্কৃতির কথা।

তার কাছে জানতে চাওয়া হয় একজন সংখ্যালঘু নারী হিসেবে বাধা বন্ধকতা কিভাবে পেরিয়ে এই পর্যায়ে এসেছেন তিনি। এর উত্তরে তিনি বলেন বাধা সবসময় থাকবে, প্রয়োজন কোথায় কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি হতে পারে তা নির্ণয় করা এবং একটি পরিকল্পনা মোতাবেক নিজেকে তৈরি করে এগিয়ে চলা। বলছিলেন তিনি যেখানে কাজ করেন সেখানে বেশীর ভাগ পুরুষ এবং সবাই শ্বেতাঙ্গ। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করা কঠিন হলেও তিনি দমে যাননি। মেনে চলেছেন বেশ কিছু পরামর্শ। এবং সেই একই পরামর্শ দিলেন নবীনদের জন্য। বললেন, কাজ করার সময় মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে যাতে করে কেউ কোনও নালিশ করতে না পারে। কেননা একজন সংখ্যালঘু নারী হিসেবে টাকে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়েছে এই বিষয়ে। ভাল কাজ করলে সবাই প্রশংসা করবে এবং আস্থা রাখবে আপনার ওপর, কেউ আপনাকে দমাতে পারবেনা।

বারবারা ব্রেডী ভয়েস অফ আমেরিকার রিসোর্স অ্যান্ড প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, টেকনলজি, সার্ভিসেস এবং ইনভেশনের বিভাগে কাজ করেন সহকারী পদে। ২৮ বছরে বিভিন্ন বিভাগে কাজের অভিজ্ঞতা আছে তার।ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে তিনি যেই পরামর্শ দিলেন,যতো অভিজ্ঞতা নিতে পারেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে, আপনার জন্য ততো ভালো। ভিন্ন ধরনের দক্ষতা আপনাকে চাকরীর ক্ষেত্রে এনে দেবে অন্য মাত্রা্র একটি প্রতিযোগিতা মুলক সুবিধা। আপনি নানা মানুষের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করবেন, সে ছোট বড় যেই হোক।

বাংলা সার্ভিসের প্রধান রোকেয়া হায়দার তার জীবনের অমূল্য ৩৮ টি বছর কাটিয়েছেন ভয়েস অফ আমেরিকাতে। বলছিলেন, এইতো সেদিন ৪ সন্তানকে নিয়ে পাড়ি দিয়েছেলেন এই দেশে।

বলছিলেন তার অভিজ্ঞতার কথা, বলছিলেন যারা নতুন আসছে তারা যেন এই পেশাকে ভালবেসে আসে এবং সব সময় নতুন কিছু শিখতে ভয় না পায়।তিনি বলছিলেন একটি গ্লাসকে সবসময় অর্ধেক ভরা দেখতে, যার মানে হল সবকিছু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা। বললেন, শেখার কোন শেষ নেই এবং যে কোন মানুষের কাছ থেকে যেকোন কাজ শেখা সম্ভব। তিনি নিজে এই সবকিছু মেনে চলেছেন সারাজীবন। কষ্টকে কখনও কষ্ট মনে না করে মনে করেছেন চ্যালেঞ্জের একটি স্তম্ভ যা তাকে অতিক্রম করতে হবে। মন প্রাণ দিয়ে কাজ করলে, সেই কাজ অবশ্যই ভালো হয়।

ডাইয়েন বাটস ভয়েস অফ আমেরিকায় কাজ করছেন ত্রিশ বছর ধরে। তিনি ম্যানেজমেন্ট অফিসের সিনিয়র প্রোগ্রাম এনালিস্ট। নতুনদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন কঠোর পরিশ্রম সবসময় উন্নতির শিখরে উঠতে সাহায্য করে। অর্থ অযথা নষ্ট না করে জমাতে পরামর্শ দিলেন। বললেন জীবনে বিপদ কখনো বলে কোয়ে আসেনা। তাই বিপদের কথা মাথায় রেখে টাকা জমাতে বললেন। প্রতিজগিতার বাজারে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সবসময় নানা প্রযুক্তি সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখা, শিখে রাখা।

যোয়ি লুডাকি ভয়েস অফ আমেরিকার গ্রীক বিভাগে কাজ করছেন অনেক বছর। তিনি বললেন, একটি মানুষের ব্যবহার তাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। প্রতিদিন সকালে কর্মক্ষেত্রে ঢুকে আপনি যদি সবাইকে হাসি মুখে গুড মর্নিং বলেন, তাহলে আপনার সহকর্মীরা আপনাকে মনে রাখবে, আপনার প্রশংসা করবে। সহকর্মীদের যেকোনো কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে তারাও যেমন খুশী হবে, সেই কাজটি আপনার অজানা থাকলে, সেটি শেখা হয়ে যায় সাহায্য করার অজুহাতে।

আরও আলোচনা হয় কিভাবে এই মহীয়সী নারীরা পরিবার-সন্তান এবং কর্মক্ষেত্র দুটো একসঙ্গে চালিয়ে নিয়ে গেছেন। তারা সবাই বলছিলেন খুব সহজ ছিলোনা, তবে অনেকের সাহায্য পেয়েছিলেন বলেই এতদুর আসতে পেরেছেন। তাই নতুনদের বলছিলেন, ধৈর্য ধরে, দৃঢ় মনোভাব নিয়ে, মন প্রাণ দিয়ে কাজ করে গেলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে আর কোন কিছুই লাগেনা।

Your browser doesn’t support HTML5

women all stars