বাংলাদেশেও ওমিক্রন আতঙ্ক, বিচ্ছিন্ন হলো দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বিমান যোগাযোগ

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ, ডা. মুশতাক হোসেন, অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক

বাংলাদেশে করোনা আতঙ্ক অনেকটাই কমে গিয়েছিল। একদিন মৃত্যু কমে এসেছিল শূন্যের কোঠায়। সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু নতুন করে ওমিক্রন ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বিমানযোগাযোগ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ দেশের প্রবেশ পথে স্ক্রিনিং আরও জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে যারা আসবে তাদের বিষয়ে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই স্ক্রিনিং ছাড়া আক্রান্ত দেশের কোনো ব্যক্তিকে দেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নতুন এই ভাইরাসকে আগ্রাসী বলে বর্ণনা করেছেন। জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য 'ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি সেকেন্ড স্পেশাল সেশনে' অংশ নিতে যাত্রার পূর্বে এক অডিও বার্তায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমাদেরকে আরও তৎপর হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরতে হবে।

এই ভাইরাস নিয়ে বেশি আতঙ্কিত না হয়ে দেশবাসীকে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি জানান জেলা প্রশাসনকে আরও বেশি তৎপর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও চিন্তিত। তারা বলছেন, এটাকে হেলাফেলা করার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেছেন, একটি পরামর্শক কমিটি অবিলম্বে গঠন করা উচিত। তিনি বলেন, প্রথমত দেখতে হবে এই ভ্যারিয়েন্টটি টিকা প্রতিরোধ করে কিনা। আরেকটি হলো, এর কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন হবে কিনা। করোনাভাইরাসের যে সব প্রকরণ তাড়াতাড়ি ছড়ায় সেগুলো আমাদের জন্য বিশেষ করে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। এগুলোকে যদি আগে থেকেই চিহ্নিত করা যায় তাহলে নিরাময় সম্ভব বলে মত দেন এই বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন- বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও স্থলবন্দরে আগে ভাগেই সতর্কতা বাড়াতে হবে। আর যারা আক্রান্ত দেশ থেকে আসবে তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে টেস্ট করতে হবে।

আইইডিসিআরের অন্যতম পরামর্শক ডা. মুশতাক হোসেন বলেছেন, যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে তাদের জিনোম সিকোয়েন্স করতে হবে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আক্রান্ত কোনো দেশ থেকে আসলে তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে। তিনি বলেন, এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে টিকা মাত্র শতকরা ২৫ ভাগ কার্যকর। এ কারণে অনেক বেশি লোককে টিকা দিতে হবে। তাহলেই বেশি সংখ্যক মানুষকে সুরক্ষিত রাখা যাবে।

উল্লেখ্য যে, এখন পর্যন্ত দেশে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে ৫ কোটি ৭৯ লাখ ১৫ হাজার জনকে। দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৭১ হাজার জনকে।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে চার থেকে পাঁচজনের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের তাগিদ দেন। কমিটির কাজ হবে এই ভ্যারিয়েন্টকে মনিটর করা। পৃথিবীর কোন দেশে কীভাবে ছড়াচ্ছে সেটাও তারা মনিটর করবেন। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ যাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে সে দিকে নজর দেয়া উচিত। এছাড়া যেসব দেশ আক্রান্ত হচ্ছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার পরামর্শ দেন এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।