অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বান্দরবানে কেএনএফ'র আরো ৯ সদস্য গ্রেপ্তার, জানিয়েছে আইএসপিআর


কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)

বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম এলাকা থেকে, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) আরো ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বান্দরবানে সাম্প্রতিক ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা উপজেলা শাখার সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে এবং ওই শাখার ভল্ট থেকে দেড় কোটি টাকা লুটপাটের চেষ্টা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কেএনএফ। পরদিন (৩ এপ্রিল) বান্দরবানের থানচি উপজেলায় সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের শাখায় লুটপাট করে তারা।

পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এই ঘটনার পর, এ পর্যন্ত রুমা ও থানচি থানায় ৮টি মামলা হয়েছে। আর, গত ৭ এপ্রিল পার্বত্য এলাকায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত কেএনএফ-এর প্রধান সমন্বয়কারী চেওসিম বম এবয় আরো অর্ধশতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)

বান্দরবানে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ২০২২ সালের এপ্রিলে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। কেএনএফের ঘোষণা ও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার অন্তত ছয়টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা।

এ সময় তারা ফেসবুকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলাগুলোর সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে।

এদিকে, কেএনএফ পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিপূর্বে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলো।

সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০২৩ সালে অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‌্যাব

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

XS
SM
MD
LG