পৃথিবীর লক্ষ কোটি আইফোন ব্যবহারকারী তাঁর কন্ঠের সঙ্গে পরিচিত। ‘আবহাওয়া কেমন, ভালো পিজ্জা কোথায় পাবেন, আজ কার জন্মদিন’ এমন সাধারণ প্রশ্নতো বটেই, অসাধারণ, অস্বাভাবিক প্রশ্নের উত্তর মুহুর্তেই আপনাকে দিচ্ছেন তিনি। ভালো খারাপ যে কোনো মন্তব্যের জবাব দিচ্ছেন সহাস্য কন্ঠে। হ্যা সিরির কথা বলছি। আইফোনের ভার্চুয়াল সহকারী সিরিকে চেনেন না এমন আইফোনের মালিক খুব কমই আছেন।
এ্যাপলের নারী কণ্ঠের ভারচুয়াল এ্যাসিস্ট্যান্ট সিরি। বাস্তবে তাঁর নাম সুজান বেনেট। বেনেটের কন্ঠেই আমরা শুনতে পাই সিরির কন্ঠ। ২০১১ সালে আইফোন ৪ চালূ হওয়ার পর থেকে সিরির কন্ঠ পরিচিত হতে শুরু করে আইফোন ব্যবহারকারীদের মাঝে।
কণ্ঠ শিল্পে আসা নিয়ে বেনেটর মন্তব্য, ‘এটা খানিকটা কাকতালীয়’। আগে অবশ্য গান গাইতাম। জিঙ্গলে কন্ঠ দিতাম, ষ্টুডিওতে নানা ধরনের কাজ করতাম, পর্দার আড়ালে অনেক অনুষ্ঠানে কন্ঠ দিতাম, গান গাইতাম নিয়মিত, রেডিও টিভির বিজ্ঞাপনে জিঙ্গেল এবং ভয়েসওভার করতাম”।
একদিনের ঘটনা। ষ্টুডিওতে একদিন এক শিল্পী কন্ঠ দিতে অনুপস্থিত। বেনেটকে ডাকা হলো। সেই থেকে শুরু হলো তার নতুন পেশার যাত্রা। তবে এখনো এ্যাপলের কর্মী নন তিনি। সিরির কন্ঠ দেয়ার জন্য কোনো অডিশনও তার নেয়া হয়নি। তার কোনো ধারণাই ছিল না যে সিরির কন্ঠ হিসাবে তার কন্ঠ ব্যবহার করা হবে। ২০১৫ সালে তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের খুব সাধারণ কিছু ভয়েসওভার করতেন।
“প্রতিদিন চার ঘন্টা প্রোগ্রামারদের তৈরী করা নানা ধরণের প্রবাদ প্রবচন পড়া বিভিন্ন ধরনের বাক্য পড়ার চর্চা করতে হতো আমাকে। বাক্যগুলো খুব গবেষণা করে করা হতো যাতে পরিচ্ছন্ন শব্দ হয়”।
ঐ বাক্যগুলো অনেক ক্ষেত্রে খুব আজব ধরণের ছিলো। যেমন, “কাউ হোয়েস্ট ইন দা টাব টুডে”, কিংবা “ফাসা আস্ক ফাসা আস্ক ফাজি”। আবৃত্তি বা উচ্চারণ চর্চার মতো শব্দ ও বাক্য চর্চা করানো হতো।
ঐসব বাক্য চর্চার পর নানাভাবে রেকর্ডিং করা হতো; সেগুলো থেকে ভাওয়েল বা স্বরধ্বনি, কন্সোনেন্ট বা ব্যাঞ্জনবর্ণ, সিলেবল বা শব্দাংশ, ডিপথংস বা সন্ধ্যাক্ষর আলাদা করে শোনানো হতো। রেকর্ডিং এর পিচ (মাত্রা) এবং স্পিড (গতি) নিয়ে পুংখানুপংখ ব্যাখ্যা করা হতো।
ষ্পষ্ট সুন্দরভাবে শব্দ ইচ্চারণের এই পদ্ধতির নাম ‘কনকেটেনেশন’ (concatenation)। আর এভাবেই চর্চা করতে করতে সিরির উদ্ভব। বেনেটের কন্ঠের শব্দ ও বাক্য গবেষণা করতে করতেই সিরির তৈরী। জিপিস বা টেলিফোনের মতো ডিজিটাল যন্ত্রে সেই শব্দই আমরা শুনি।
সিরির কন্ঠে তার নিজের কন্ঠ শুনতে কেমন লাগে এই প্রশ্নে বেনেট বলেন, “আমি দেখি সবাই সিরিকে পছন্দ করে, তখন খুব ভালো লাগে”।
কন্ঠশিল্পী হতে কি লাগে এই প্রশ্নে, বেনেটের মন্তব্য, “আপনাকে ভালো করে ‘পড়া’ জানতে হবে আর ওই পড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পড়তে জানতে হবে। অনেক সময় দ্রুত পড়তে হতে পারে”।
“চমৎকার একটি কন্ঠ থাকলেই চলবে না; কন্ঠের নানান কাজ শিখতে হবে, বুঝতে হবে”।
বেনেটের মতে ভয়েসওভার একটি প্রাকৃতিক গুন। এটি সঙ্গীতের মতো, আবৃত্তির অংশ। তিনি বলেন, “ভালো কন্ঠ শিল্পী হতে হলে ছন্দ জ্ঞান থাকাটা জরুরী”। ২০১৩ সালে এ্যাপল বেনেটের কন্ঠ ব্যবহার বন্ধ করেছে; কিন্তু তার কন্ঠ একটি আইডল হয়ে রয়েছে ডিজিটাল যন্ত্রে ভয়েসওভারেরে জগতে।