৫১ বছর আগে আফ্রিকান আমেরিকান যাজক যিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সেই ডঃ মারটিন লুথার কিং জুনিয়রকে হত্যা করা হয়। তার নেতৃত্বে সেই আন্দোলন প্রতিধ্বনিত হয় পুরো বিশ্বে। বদলে দিয়েছিল পুরো জাতিকে।
আজকে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন স্বরূপ পালিত হচ্ছে দিনটি।
১৯৬৮ সালের এপ্রিলের ৪ তারিখে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী, মারটিন লুথার কিং জুনিয়রকে হত্যা করা হয়। তার হত্যার কারণ তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে, তার অন্যায় তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন।তিনি বলেছিলেন...
আমার একটি স্বপ্ন আছে, আমি স্বপ্নে দেখি একদিন এই জাতি সব বিভাজন ভুলে এক উন্নত জাতি হিসেবে পরিণত হবে,।যেই জাতি মানুষকে তার কর্মে বিচার করবে, তার গায়ের রঙ দিয়ে নয়।
এই স্বপ্নের কথাগুলো তিনি পুরো বিশ্বকে জানিয়েছিলেন ১৯৬৩ সালের ২৯ অগাস্ট। তার এই শক্তিশালী বক্তৃতা পুরো যুক্তরাষ্ট্রকে জাগিয়ে তোলে। নাগরিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার বিষয়গুলো সম্পর্কে ভাবিয়ে তোলে।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির মিডিয়া ও কমুনিকেশনের অধ্যাপক শেরি ওয়িলিয়ামস বলেন মারটিন লুথার শুধুমাত্র জাতিগত সমতার জন্য লড়াই করছিলেন না। তিনি অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের লক্ষ্যেও লড়াই করছিলেন।
আমরা জানি যে মারটিন লুথার মারা যাবার আগে মেম্পফিসে গিয়েছিলেন দরিদ্র অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। সেখানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে যেই শ্রমিকরা কাজ করছিলেন তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।
হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গ্রেগ কার বলেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হলেও, অর্থনৈতিক তারতম্য রয়ে গেছে।'আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির দিকে নজর দেন তাহলে লক্ষ্য করবেন যে একটি কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের আয়ের তুলনায় একটি শ্বেতাঙ্গ পরিবারের আয় বেশী। এই বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না।'
তবে দেখা যাচ্ছে সব জাতির ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চাকরীর বাজারকে জোরদার করেছে। রয়টার্স এবং শ্রম অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কৃষ্ণাঙ্গদের বেকারত্তের হার গত বছর ৬ শতাংশের নিচে নেমে আসে যা কিনা গত ৪৬ বছরে সর্বনিম্ন। তবে এরপরেও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় উঠে এসেছে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ।
ইয়নাস বেশাওরেড সিলিকন ভ্যালীতে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি জানান একজন এফ্রিকান অভিবাসী হিসেবে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের মতোই বৈষম্যের শিকার।
ইয়নাস বলছিলেন, 'ছোট ছোট ঘটনা দিয়েই এই বৈষম্যের বিষয়গুলো খোলাসা হয়।একজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে মিটিং করতে গেলে তার অনিহা দেখেই কারণ বুঝে যাবেন। অনেক ক্ষেত্রে আপনি যে ধরনের ব্যবসার প্রস্তাব নিয়ে গেছেন তা পছন্দ না হলে, বা জেভাবে আপনি কাজটি করতে চাইছেন তা পছন্দ না হলে, তারা গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু যেভাবে তারা অবজ্ঞা করেন তাতে বোঝা যায় আমার গায়ের রঙের কারণেই তারা এমন ব্যবহার দিচ্ছেন। তখন আমি পরবর্তী আরেকজনের কাছে চলে যাই। কারণ এভাবে সময় নষ্ট করার কোনও মানে নেই।'
এফ্রিকান আমেরিকানদের ওপর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নৃশংসতা আরও একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৪ সালে মিসোরি অঙ্গরাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ এক ব্যক্তিকে গুলী করে হত্যার পর ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার নামে আন্দোলন গড়ে ওঠে।
ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার এর সমর্থক ডেনিস রদ্রিগেয বলেন,'এই আন্দোলন আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা বুঝতে শিখেছি যে এই মুহূর্তে আমাদের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও একদিন আমাদের এই শ্রমের ফল আমরা পাবোই।'
দা এশিয়ান এইজের সম্পাদক সৈয়দ বদরুল আহসানে মারটিন লুথার কিং জুনিয়র সম্পর্কে ভয়েস অফ আমেরিকাকে সাক্ষাৎকার দেন।
বিস্তারিত শুনুন সানজানা ফিরোজের প্রতিবেদনে।