নির্ধারিত সময়ের আগেই কোনো রকমের চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়েছে ট্রাম্প কিম বৈঠক। তবে দেড় দিনের বৈঠককে ফলপ্রসু আখ্যা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ভিয়েতনামের হ্যানয়ে বুধবার শীর্ষ বৈঠকের শুরুর দিকে ডনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উন দুজনই বলেছিলেন আমাদের দ্বিতীয়বারের সাক্ষাৎ হতে চলেছে ঐতিহাসিক এবং মনে রাখার মতো কিছু ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক গুরুত্বপূর্ন আলোচনাগুলো প্রথমদিন রেখে দেয়া হয় বৃহস্পতিবার হ্যানয়ের ল্যান্ডমার্ক মেট্রোপোল হোটেলে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকের জন্য। দুই নেতাকেই অত্যন্ত আশাবাদী দেখায়।
সময় গড়িয়ে বৃহস্পতিবার আসে আর কর্মসূচীর সময়সীমা বদলায়। স্বাক্ষর অনুষ্ঠান, লাঞ্চের সময় তড়িঘড়ি করে কমিয়ে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেয়া হয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রথমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৈঠক সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন- যে আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়েছে; তার বদলে বলেন কিম অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির একজন লোক। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন- যেটুকু আমাদের ধারনা ছিলো, অর্থাৎ একটি সমঝোতায় বা চুক্তিতে আসার জন্যে যার যতোটুক ছাড় দেয়া দরকার, তার চেয়ে বেশী দাবী করেছেন কিম।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “মূলত তারা চায় তাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেয়া হোক। আমরা তা করতে পারি না। তার বদলে তারা তাদের বড় একটি অঞ্চল পরমানুমুক্ত করতে রাজী। আমরাও সেটা চাই; কিন্তু নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে দেয়ার বদলে নয়। আমাদের আরো আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে ঐ মতের মিল না হওয়ার কারনে”।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ইয়বিয়ন পারমানবিক কম্প্লেক্স থেকে পরমানু কর্মসূচী ধ্বংস করার বিষয়ে ইতিবাচক ভাব দেখিয়েছেন কিম। এছাড়া ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা বা এ ধরনের কাজকর্ম থেকে বিরত থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে প্রেসিডে বলেন, তিনি এবং মাইক পম্পেও দুজনই মনে করেন যে চুক্তিটি করার আশা তারা করেছিলেন; তেমন সমঝোতা আলোচনা হয়নি।
“আমি আজই একটি চুক্তি করতে পারতাম- কিন্তু সেটা ভালো চুক্তি হতো না। বলা যেতো যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আমি তাতে খুশী হতাম না। মাইকও হয়তো খুশি হতো না। আমাদের আরো বড়ো কিছূ আশা রয়েছে তার সুযোগও আছে। আমরা ধরে নিয়েছি এটা যথার্থ সময় নয়; আমরা আরো ভালো কিছু চাই”।
পম্পেও বলেন তিনি আশা করছেন দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে শিঘ্রই নতুন করে আলোচনা শুরু হবে। বলেন, টাইমিং এ সিকুয়েন্স ইসু রয়েছে এর মধ্যে- যা দুই নেতার মধ্যে চুড়ান্ত কিছু হওয়া থেকে হয়তো বিরত রেখেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তিনি কিম জং উনের সঙ্গে তৃতীয় একটি সম্মেলন করার কথা দিয়েছেন। এবং উত্তর কোরিয়া বিরুদ্ধে যেসব নিষেধাজ্ঞা রয়েছে – আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় সেগুলো রেখে দেয়া বা কমানো এসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।
কোনো রকমের চুক্তি বা সিদ্ধান্ত ছাড়া সম্মেলন শেষ হওয়ায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি এ নিয়ে দক্ষিন কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের সঙ্গে কথা বলছেন।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক, এই মুহুর্তে চীনের বেইজিং এ বসবাসরত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের শিক্ষক ফরিদুল আলম ইবাচক মন্তব্য করে বলেন এটি এক বা দুই বৈঠকে সমাধান হয়ে যাওয়ার মতো বিষয় নয়। সময় লাগবে। হ্যানয় সম্মেলনে যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা খারাপ না।