বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষ দিনের ষষ্ঠ অধিবেশন শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, "ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস অফিসের সঙ্গে দুবার আলোচনা করেছি। সেই অফিসকে অবহিত করা হয়েছে আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তারা যেন শিগগিরই আমাদের তারিখ দেয়। সেই তারিখ অনুযায়ী আমরা আলোচনায় বসতে রাজি আছি।"
লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
এ কমিটির কাজ কী হবে- জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, "এই আইন প্রধানত সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য করা হয়েছে। বাকস্বাধীনতা বা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য করা হয়নি। সেটা যদি করা হতো এটা আইন হিসেবেই গণ্য হতো না। কারণ সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে রাখা হয়েছে। আমরা একটু আগে এই আইন করেছি, অনেক দেশেই করা হয়েছে এবং অনেক দেশ এই আইন করা আবশ্যক মনে করছে।
তিনি জানান, "ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার সঙ্গে সঙ্গে তা যেন মামলা হিসেবে গ্রহণ করা না হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরা বলে দিয়েছি আইসিটি আইন অনুযায়ী যেন সেলে পাঠানো হয়। সংবাদমাধ্যমের কর্মী যারা, যারা সাংবাদিক, তাদের যেন তাৎক্ষণিক আটক না করা হয়, সেটার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।" এই নির্দেশনা দেয়ার পরে এই আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করাটা অনেকাংশে কমে গেছে বলেও দাবি করেন মন্ত্রী।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট বা সিপিজে তিনজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানায়।
নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক এই সংগঠনটি এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়ে অভিযোগ করেছে যে রাজনৈতিক মন্তব্যের কারণে ওই তিন সংবাদ কর্মী কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিয়ে নির্মম এই আইনটিকে বাতিলের দাবি জানিয়েছে সিপিজে।
ওদিকে, ২০২১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের বলেন, "বাংলাদেশ সরকার আগ্রাসীভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করেছেI সরকারের করোনা মহামারী ব্যবস্থাপনা নিয়ে মন্তব্য করার জন্য কয়েক ডজন লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রথমবারের মত শিক্ষাবিদরাও রয়েছেন।"
নেড প্রাইস বলেন, "আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি তারা যেন সাংবাদিকসহ সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করে। যাদেরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় আটক করা হয়েছে, তাদের ন্যায্য বিচার প্রক্রিয়া যেন নিশ্চিত করা হয়।"