অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার শিগগিরই সমাধান হবে–শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি


শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। (ছবি- ইউএনবি)
শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। (ছবি- ইউএনবি)

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের সমস্যা শিগগিরই সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে তিনি বলেছেন, “উপাচার্যের পদত্যাগ বা অপসারণ ভিন্ন বিষয়।”

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর হেয়ার রোডে সরকারি বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

দীপু মনি বলেন, “একজন ভিসি চলে গেলে আরেকজন ভিসি আসবেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সমস্যা থেকে গেলে তাদের কোনো লাভ হবে না। তাই সমস্যার সমাধান করা দরকার।”

তিনি বলেন, “শাবিপ্রবির এই পুরো বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকটা দিন তাদের সঙ্গে নানাভাবে আমরা সম্পৃক্ত থেকেছি। নানাভাবে আলাপ আলোচনা হয়েছে। অনশন যারা করছিলেন এবং যারা আন্দোলন করছিলেন সবাই মিলে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি—আমাদের যে শিক্ষার্থীরা যারা এই অবরোধ কর্মসূচিতে রয়েছেন সেটি তারা তুলে নেবেন এবং আন্দোলনের ইতি এখানেই টানবেন।”

তিনি বলেন, “এই অর্থে এখন আর আন্দোলন করবেন না শিক্ষার্থীরা। তবে তারা যে অর্থে আন্দোলন করেছেন সেই কারণগুলো আমরা অ্যাড্রেস করব এবং সমাধান করব। পুরো বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। যারা অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”

দীপু মনি বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সরকার সবাই একপক্ষ। এখানে দুই পক্ষ বলে কিছু নেই। আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েছেন। তারা একটু গুছিয়ে উঠুক। যারা আন্দোলনের কারণে অসুস্থ হয়েছে তারা সুস্থ হয়ে উঠুক। কিছুদিন পর আমরা সেখানে যেতে পারি। শিক্ষার্থীরা চাইলে আমরা যেকোনো সময় আলোচনায় বসতে পারি।”

শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, “শাবিপ্রবিতে যে সমস্যাগুলো নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে তা যৌক্তক। কিন্তু এখানে পুলিশি অ্যাকশন হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। একটি দুঃখজনক।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সকল সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করব। তারা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে, আমরাও তাদের আস্থার প্রতিদান দেব। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের আন্দোলন ভাঙচূরসহ নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এখানে তেমন কিছু ঘটেনি। তারা শান্তিপূর্ণভাবে গত সাত-আট দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে গেছে। এ জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই।”

তিনি বলেন, “আন্দোলনের কারণ ও সমস্যা সকল বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। এতে যেই অপরাধী হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে কিছু সমস্যা আমাদের সামনে উঠে এসেছে। আমরা তা খুঁজে বের করে সমাধান করার সুযোগ পেলাম। সবাই মিলে সেসব সমস্যা সমাধান করা হবে।”

যে সমস্যাগুলো নিয়ে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, সে সমস্যা কিন্তু শুধু শাবিপ্রবির একার নয় বলে মন্তব্য করেন

শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও একই সমস্যা রয়েছে। আমাদেরকেই মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা খুব জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন সুষ্ঠুভাবে চলে, যেন সেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে, শিক্ষার্থীরা যেন সুন্দর পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারে সেটি আমাদের জন্য জরুরি। শুধু শাবিতে নয়, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনসহ নানা ধরনের সংকট রয়েছে সেগুলোও সমাধান করা হবে। আমরা চাই সকল সমস্যা সমাধান করে সামনে এগিয়ে যেতে। শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে। আমরাও তাদের ওপর আস্থা রেখে এগিয়ে যাব।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, “আমি শুনেছি শাবির কয়েকজন শিক্ষার্থীর নামে মামলা হয়েছে। তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো যদি কেউ আটক থাকে তবে সেটি আমরা খোঁজখবর নিয়ে সমাধান করব। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এসব সমস্যা সমাধান করা হবে।”

উপাচার্যকে সরানো হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “একজন উপাচার্যকে সরালে আরেকজন উপাচার্য আসেন। রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ পান। তাই তাকে সরাতে হলে একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। তাকে রাখা হবে না সরানো হবে সেটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সকলের প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানো হয়েছে। আমরা আশা করি, তারা তাদের অবরোধ তুলে নিয়ে ক্লাসে ফিরে যাবেন। এ জন্য বর্তমান সকল সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করা হবে।”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “অনশনের অষ্টম দিন আজ সকালে শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙেছেন। তারা অনশন ভেঙেছেন, এ কারণে তাদের সাধুবাদ জানাই। যারা আন্দোলন করছেন তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা তাদের সকল দাবি বাস্তবায়ন করব।”

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “শিক্ষার্থীরা যখন চাইবে আমার সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারবে। তারা চাইলে আমি সিলেটে যেতে পারি। তারা অনশন ভেঙেছে। এখন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আন্দোলন শেষ করা হবে। শুধু শাবিপ্রবিতে নয়, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসন হলসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা হবে।”

তিনি বলেন, “আন্দোলনের সময় কিছু মামলা হয়েছে, পেছনে যা কিছু ঘটেছে থাকবে না। তাদের কোনো কিছুতেই এর কোনো প্রভাব থাকবে না। মামলা থাকবে না। সমস্যার যখন সমাধান হচ্ছে, যারা এগুলো করেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে এগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করব।”

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় পুলিশ দায়ী থাকলে ব্যবস্থা

শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হয়রানি বা হামলার অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এ কথা জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অভিযান, গণমাধ্যম ও পরিকল্পনা) মো. হায়দার আলী খান। পুলিশ সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে চতুর্থ দিনের অধিবেশন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার রাজারবাগ মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৩ জানুয়ারি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি বেলা পৌনে ৩টার দিকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য তার কার্যালয় থেকে বের হয়ে ডিনদের এক সভায় যাওয়ার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়লে তার সঙ্গে থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে আশ্রয় নেন। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওই ভবনের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে স্লোগান দিতে শুরু করেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ উপাচার্যকে মুক্ত করতে ভবনের ভেতরে ঢুকতে চাইলে আন্দোলনকারীরা বাধা দেন। এ সময় একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে তার বাসভবনে নিয়ে যায়। পরে এই আন্দোলন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।

১৯ জানুয়ারি বিকেল ৩টা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ ও পুলিশের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সাত দিন পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙfন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল পানি খাইয়ে তাদের অনশন ভাঙান। টানা সাতদিন ধরে অনশন করছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর আগে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে ক্যাম্পাসে আসেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক। আন্দোলনরত ২৬ জন শিক্ষার্থীকে মুখে পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙানো হয়।

বুধবার ভোর ৪টার দিকে জাফর ইকবাল দম্পতি ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছান।

ক্যাম্পাসে এসে তারা শিক্ষার্থীদের বলেন, আজ উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমার বাসায় আলোচনা হয়েছে। তারা বাসায় এসেছিল। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তোমরা যা চাইছ, যে দাবি তোমাদের, সেটা পূরণ হবে। তোমাদের ওছিলায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠিক হবে।

এদিকে আন্দোলন করা এই শিক্ষার্থীদের অর্থসহায়তা দেওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন পাঁচ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে সিলেটে নেওয়া হয়। বুধবার সন্ধ্যায় তারা জামিন পান।

XS
SM
MD
LG