অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে সেনা ও যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে নেটো


২৮শে জানুয়ারি লিথুয়ানিয়ায় নেটো এয়ার পুলিশিং মিশনের সময় ড্যানিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্স যুদ্ধ বিমান এফ-১৬ এর সামনে দাঁড়িয়ে একজন সেনা কর্মকর্তা। ছবি- এপি)
২৮শে জানুয়ারি লিথুয়ানিয়ায় নেটো এয়ার পুলিশিং মিশনের সময় ড্যানিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্স যুদ্ধ বিমান এফ-১৬ এর সামনে দাঁড়িয়ে একজন সেনা কর্মকর্তা। ছবি- এপি)

ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ার প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েনের জবাবে নেটোভুক্ত দেশগুলো পূর্ব ইউরোপে হাজার হাজার সেনা, যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে।

রাশিয়া বারবার অস্বীকার করলেও দেশটি ইউক্রেন আক্রমণ করবে বলে আশঙ্কা করছে পশ্চিমা দেশগুলো।

বাল্টিক অঞ্চলের আকাশসীমায় নেটোর “এয়ার পুলিসিং” মিশনকে শক্তিশালি করতে চারটি ডেনিশ এফ-১৬ যুদ্ধবিমান লিথুয়ানিয়ায় অবতরণ করেছে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখলের পর নেটো এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডে চার থেকে পাঁচ হাজার সেনা মোতায়েন করে। যাকে তারা “এনহ্যান্সড ফরোয়ার্ড প্রেজেন্স” (বর্ধিত সম্মুখ উপস্থিতি) হিসেবে অভিহিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ৮ হাজার ৫০০ সৈন্য প্রস্তুত রেখেছে।

“খুব শিগগিরই পূর্ব ইউরোপ ও নেটো সদস্য দেশগুলোতে সেনা পাঠানো হবে”, শুক্রবার সাংবাদিকদের জানান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। এর বেশির ভাগই জার্মানি ও ব্রিটেনে। ধারণা করা হচ্ছে, কিছু সেনাকে পূর্ব ইউরোপের নেটো মিত্রদের কাছে ক্রমান্বয়ে স্থানান্তর করা হতে পারে।

নেটোভুক্ত রাষ্ট্র

ফ্রান্স রোমানিয়ায় কয়েকশ সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে। ২৭ জানুয়ারী বুখারেস্ট ভ্রমণকালে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লি বলেন, “গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ যেমন বলেছিলেন, আমরা বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহে নেটো মিশনে আমাদের ইউরোপীয় অংশীদারদের নিরাপত্তায় আগেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছি এবং ভবিষ্যতেও রাখব”।

এদিকে স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানিও তাদের পূর্ব ইউরোপীয় মিত্র দেশে সেনা, যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।

ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী অস্ত্র

ব্রিটেন ইউক্রেনে প্রায় ২ হাজার ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী অস্ত্র পাঠিয়েছে এবং তার নেটো মিত্রদেশে ইতিমধ্যে নিয়োজিত ১ হাজার ১৫০ সেনার দ্বিগুণ সংখ্যক সেনা সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের এই সপ্তাহেই ইউক্রেন সফরের কথা রয়েছে এবং তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও ফোনে আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, “আমি মনে করি সেনা মোতায়েন অতীব জরুরি এই অর্থে যে, এটি পুতিনের জন্যে হুঁশিয়ারি বার্তা স্বরূপ। আর বার্তাটি হলো ইউক্রেনের মতো একটি সার্বভৌম দেশকে আক্রমণ করার কৌশলগত ভুলের ফলাফল হবে ভীতিকর”।

হাঙ্গেরির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বুদাপেস্টে এক বৈঠকের পর সোমবার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ওয়ালেস।

প্রতিবন্ধকতা

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক জুলি নরম্যান বলেন, ইউক্রেনে কমব্যাট সেনা নিয়োগের কোনো পরিকল্পনা নেই নেটোর।

“ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রগুলোতে নেটোর সেনারা আছে, তারা মূলত প্রস্তুতি, প্রতিরক্ষা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্যে নিয়োজিত। তারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেবেন না বলেই আশা করা হচ্ছে”।

নেটো সামরিক সমাবেশ বাড়াতে পারে মন্তব্য করে নরম্যান আরও বলেন, “যুদ্ধ বাধলে মিত্র রাষ্ট্রগুলোতে অবস্থিত সামরিক বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানো হবে”।

নেটো বলেছে, তারা রাশিয়ার আগ্রাসনের জবাব দিচ্ছে। অন্যদিকে মস্কো পশ্চিমাদের এই প্রতিক্রিয়াকে “পাগলামি” আখ্যা দিয়েছে এবং ইউক্রেন হামলার পরিকল্পনা নেই বলে মন্তব্য করেছে। তারা আরও বলেছে, সাবেক সোভিয়েত অঞ্চলে নেটোর সাম্প্রতিক সেনা সমাবেশ নিরাপত্তার জন্যে হুমকিস্বরূপ।

বেলারুশের হুমকি

রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। চলতি সপ্তাহে যৌথ সামরিক মহড়ার জন্য বেলারুশে আরও কয়েক হাজার সেনা নিয়োগ করা হয়েছে।

রাশিয়া, ইউক্রেন এবং ইউরেশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপসহকারী প্রতিরক্ষা সচিব এভিলিন এন ফারকাস বলেন, পশ্চিমা মিত্রদের এখনই জবাব দিতে হবে।

“বেলারুশে নতুন করে রাশিয়ার সেনা সমাবেশ নিয়ে নেটোকেই এখন ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ বেলারুশের সঙ্গে পোল্যান্ড, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়ারও সীমান্ত সংযোগ রয়েছে এবং এই দেশগুলো নেটোর সদস্য রাষ্ট্র”, লন্ডনভিত্তিক একটি আলোচনা সভায় সম্প্রতি মন্তব্য করেন ফারকাস।

পূর্ব ইউরোপে নেটোর সেনা মোতায়েনের ফলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়তে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

XS
SM
MD
LG