অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আইএস প্রধান কাপুরুষের মত আত্মহত্যা করেছে: যুক্তরাষ্ট্র


বৃহস্পতিবার সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের আতমেহ নামক গ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অভিযানের পর লোকেরা একটি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছেন। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
বৃহস্পতিবার সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের আতমেহ নামক গ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অভিযানের পর লোকেরা একটি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছেন। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার একটি আবাসিক ভবনে ইসলামিক স্টেট এর প্রধান নেতার অবস্থান সনাক্ত করার কয়েক মাস পর, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী তার অবস্থানের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময়ে, আমির মুহাম্মাদ সা’ইদ আবদাল রহমান আল-মাওলা একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে হত্যা করেছে।

বৃহস্পতিবার ঘটনাটির কয়েক ঘন্টা পর, যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের থেকে তার মৃত্যুর ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। এর আগে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের আতমেহ্ শহর থেকে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত সন্ত্রাসবিরোধী একটি বড় রকমের অভিযানের খবর আসতে থাকে। শহরটি তুরস্কের সীমান্ত থেকে খুব বেশি দূরে নয়।


যুক্তরাষ্ট্রের ঐ কর্মকর্তারা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ দেন। তারা জানান যে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বেশিরভাগই আল-মাওলা ও তার একজন সহকারীর কারণে হয়েছে। তারা জীবিত ধরা না পড়ার বিষয়ে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিল। আল-মাওলা, আবু ইবরাহিম আল-হাশিমি আল-কুরাশী ও হাজী আবদাল্লাহ নামেও পরিচিত।

ঐ কর্মকর্তাদের একজন সংবাদকর্মীদের ফোনের মাধ্যমে জানান, “কাপুরুষতা ও মানবজীবনের মূল্যায়ন উপেক্ষা করার সর্বশেষ এক নিদর্শনে, হাজী আবদাল্লাহ একটি বিস্ফোরণ ঘটায়। বেশ বড় বিস্ফোরণটিতে সে নিজে এবং তার স্ত্রী ও সন্তানসহ বেশ কয়েকজন মারা যায়।” ঐ কর্মকর্তা আরও বলেন, “তৃতীয় তলার ঐ বিস্ফোরণটি এতটাই ব্যাপক ছিল যে, তাতে বেশ কয়েকজনের দেহ সেখান থেকে ছিটকে উড়ে গিয়ে আশেপাশে পড়ে।”

ঐ কর্মকর্তা বলেন, তারপর আইএস এর ঐ সহকারী তার স্ত্রী ও পরিবারসহ নিজেকে দ্বিতীয় তলায় আবদ্ধ করে ফেলে এবং মৃত্যুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ঐ কর্মকর্তারা বলেন যে, আল-মাওলা কর্তৃক সংঘটিত প্রাথমিক বিস্ফোরণটির পূর্বে একজন মা, বাবা ও কয়েকজন শিশু সহ একটি পরিবার সেখান থেকে পালাতে সমর্থ হয়। আল-মাওলার সহযোগীর মৃত্যুর পর আরও চার শিশুও সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হয়।

তবে, ঐ কর্মকর্তারা জানান যে, অন্যান্য বেসামরিক মানুষজনকে ভবনটি থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার সকল প্রচেষ্টায় আইএস এর ঐ নেতারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বাধা দেয়।

ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীটির অপর একটি নাম ব্যবহার করে ঐ কর্মকর্তা বলেন, “ঘটনাস্থলে হতাহতের সকল ঘটনাই আইসিস এর সন্ত্রাসীদের কারণে হয় এবং ঐ ভবনের ভেতরেই হয়।মানবজীবনের মূল্যের প্রতি তাদের চরম ও সম্পূর্ণ অবজ্ঞার বিষয়টি আইসিস বারবারই পরিষ্কারভাবে বুঝিয়েছে এবং গতরাতের অভিযানের পুরোটা জুড়েই এই বিষয়টাই স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার দিনের শুরুর দিকে একটি বিবৃতিতে, আমির মুহাম্মাদ সা’ইদ আবদাল রহমান আল-মাওলা’র মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আবু ইবরাহিম আল-হাশিমি আল-কুরাশী নামেও পরিচিত।

বাইডেন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ও আমাদের মিত্রদের রক্ষা করতে, এবং বিশ্বকে আরও নিরাপদ করতে, গত রাতে আমার নির্দেশে, উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী সফলভাবে একটি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে।” প্রেসিডেন্ট “ সামরিক বাহিনীর দক্ষতা ও বীরত্বকে” অভিযানের সফলতার কৃতিত্ব প্রদান করেন।

তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সকলে অভিযান থেকে নিরাপদে ফিরে এসেছেন।”

ইতোপূর্বে বৃহস্পতিবার পেন্টাগন জানিয়েছিল যে, উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বিশেষ দল একটি “সফল” সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে।

পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কারবি’র বিবৃতিটিতে সেই অভিযান বা তার লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে সে সময় কোন বিস্তারিত তথ্য না দিয়ে জানানো হয়েছিল যে, এই বিষয়ে পরবর্তীতে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে আরও তথ্য প্রদান করা হবে।

রাত্রীকালীন অভিযানটি ইদলিব প্রদেশে পরিচালনা করা হয়। তুরস্কের সীমান্তের নিকটবর্তী ইদলিব, সিরিয়ার সর্বশেষ বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা। এলাকাটিতে আল-কাঈদা ও অন্যান্য জঙ্গী গোষ্ঠীর কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মীও বাস করে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এর আগেও ঐ অঞ্চলটিতে আল-কাঈদার উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো ড্রোন ব্যবহার করে করা হয়েছিল।

২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বিশেষ দল ইদলিবে একটি অভিযান চালিয়েছিল, যাতে ইসলামিক স্টেট এর প্রাক্তন প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদী নিহত হয়।

আল-বাগদাদী নিহত হওয়ার কিছুদিন পরই, ২০১৯ সালের অক্টোবরে আল-মাওলা আইএস এর নিয়ন্ত্রণ নেন।

বাগদাদী খুব কম হলেও নিয়মিতভাবেই প্রকাশ্যে আসতেন। তবে, আল-মাওলা তার এই পূর্বসূরীর মত একই নিয়তি এড়াতে আরও অনেক বেশি নিভৃতে থাকতেন।

আল-মাওলার মৃত্যু আইএস এর জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে। এ পর্যন্ত ‍গুরুতর পরাজয় সত্ত্বেও জঙ্গী গোষ্ঠীটিকে পুরোপুরি দমন করা সম্ভব হয়নি।

এছাড়াও, গত অক্টোবরে ইরাকের বাহিনী, সামি জসিম মুহাম্মাদ আল-জাবুরিকে গ্রেফতার করেছিল। হাজী হামিদ নামেও পরিচিত আল-জাবুরিকে, পেন্টাগন “আইএসআইএস এর সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের একজন” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।

একজন পশ্চিমা সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তা, পরিচয় গোপণ রাখার শর্তে গোয়েন্দা সংক্রান্ত বিষয়ে ভিওএ’র সাথে আলাপকালে, আল-জাবুরির গ্রেফতারটিকে “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” হিসেবে উল্লেখ করেন। কারণ আল-মাওলা নিহত বা আটক হলে, আল-জাবুরিকেই তার সম্ভাব্য উত্তরসূরী হিসেবে ধারণা করা হত।

XS
SM
MD
LG