অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইয়েমেনী বিদ্রোহীদের হামলা ভারতীয় পরিবারের জন্য বয়ে আনল দুঃখ


রামজান রাথ এবছর ১৭ই জানুয়ারী সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে একটি জ্বালানী ডিপোতে হুথী আক্রমণ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। হাসপাতালে আহত অবস্থার একটি ছবি
ছবিঃ এপি
রামজান রাথ এবছর ১৭ই জানুয়ারী সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে একটি জ্বালানী ডিপোতে হুথী আক্রমণ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। হাসপাতালে আহত অবস্থার একটি ছবি ছবিঃ এপি

প্রথমে আতশবাজির মতো একটা শব্দ হয়ে ছিল তারপর মনে হয়েছিল পৃথিবীটিই ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল।

রামজান রথ তীব্র ব্যথা অনুভব করলেন। তিনি নিচের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলেন যে তার গায়ে আগুন লেগেছে।

গত মাসে আবুধাবিতে মারাত্মক ড্রোনের হামলায় তার তেলবাহী ট্রাকের ট্যাংকারটি বিস্ফোরিত হয়। ঐ সময় রথ তার ট্রাকের পাশে দাঁড়িয়ে ফর্ম পূরণ করছিলেন । ঐ আক্রমেণের দায় স্বীকার করেছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা।

বুধবার আবু ধাবির একটি শিল্পএলাকা মুসাফা জেলায় ভারতীয় একটি ক্যান্টিন থেকেই তিনি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন "আমি আমার চোখের সামনে আমার গাড়িটি জ্বলতে দেখেছি। ... আমার পায়ে আগুন লেগেছিল"। খুব কাছেই একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল স্থাপনায় বিস্ফোরণটি ঘটে। তিনি বলেন, "আমি আতঙ্কে কাঁপছিলাম। এত দ্রুত এটা ঘটেছিল যে কী ঘটেছিল তা স্পষ্ট মনে নেই ।

তার এটা মনে আছে যে জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়ানোর সময় তার পা থেকে রক্ত ঝরছিল।বিকটভাবে সাইরেন বাজছিল। তার কয়েক ঘণ্টা পর নিজেকে দেখলেন হাসপাতালের একটি কক্ষে।

২৪ বছর বয়সী এই যুবক দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আমিরাতের রাজধানীর শিল্পএলাকায় এসেছেন যেখানে ইয়েমেনের নৃশংস যুদ্ধের আঁচ প্রথমবারের মতো ১৭ ই জানুয়ারী পৌঁছেছিল। রামজান রথ ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাজস্থানের একটি ছোট্ট গ্রামে বড় হয়েছেন, তিনি এক কৃষকের কনিষ্ঠ পুত্র।

রাথ বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে হাজার হাজার বেসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছেন এবং বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়ের জন্ম দিয়েছে। ২০১৪ সালে ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে নেওয়া ইরান সমর্থিত হুথিদের কথাও এবং ২০১৫ সাল থেকে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে যুক্ত আরব আমিরাত যেলড়াই করছে সে কথাও তিনি আগে কখনো শোনেননি।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে যে কম বেতনের বিশাল বিদেশী শ্রমশক্তি লক্ষ লক্ষ প্রবাসী তাদেরই একজন রাথ চার বছর আগে কাজের জন্য সে দেশে এসেছিলেন। ভারতে প্রত্যন্ত গ্রামে তার বাবা-মা এবং চার বড় বোনদের জীবনের কিছুটা নিরাপত্তা দেয়ার আশায়।

একজন ট্রাক ড্রাইভার হিসাবে জীবন ছিল অবিশ্রান্ত । বাড়িতে টাকা পাঠানোর জন্য দিনে ১২ ঘন্টা পর্যন্তও কাজ করেছেন। তবে কাজটি কিন্তু নিরাপদ ছিল।

তিনি বলেন, এখানটা ভারতের মতো নয়, এখানকার পুলিশ সৎ , রাস্তাগুলি চমৎকার পাকা করা। তিনি তেল সমৃদ্ধ আবু ধাবি এবং ঝলমলে দুবাইয়ের জীবনযাপনে কখনও ভয় পাননি তবে একটি মাত্র সহিংস ঘটনায় মুহুর্তের মাঝে সব বদলে গেল।

রাথ বলেন, " কষ্টআছে, শারীরিক এবং মানসিক। রাতে যখন ঘুমাই বা যখনই আমি একা থাকি তখন আমার বিস্ফোরণের কথা মনে পড়ে যায় ।"

তার পায়ে আঘাতের কারণে ১০টি সেলাই দিতে হয়েছিল। অনেক দিন ব্যথা থাকার জন্য একটু খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়। ট্রাক চালানোর কাজটা চলে গেছে। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তিনি কাজ করতে পারবেন না। তার সঙ্গে কী হয়েছে তা তিনি কখনোই তার পরিবারকে বলবেন না বলে জানান তিনি। এটি এমন একটি বোঝা যা তারা সহ্য করতে পারবে না।

তবে রাথ বেঁচে আছেন এবং এর জন্যই তিনি কৃতজ্ঞ। ভারত ও পাকিস্তান থেকে আসা তার তিন সহকর্মী নিহত হন – বহু বছর ধরে কাজ করা এবং সঞ্চিত সুযোগগুলি হঠাৎ করেই যেন শেষ হয়ে যায়।

XS
SM
MD
LG