বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের আশংকায় ওয়াশিংটন কিয়েভে তার দূতাবাস থেকে কর্মীদের সরিয়ে নিতে প্রস্তুত।
এপি জানিয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট শনিবারের প্রথমার্ধে গৃহীত পরিকল্পনার বিষয়ে ঘোষণা দেবে। এর ফলে রাশিয়া আক্রমণের আশঙ্কায় সব আমেরিকান দূতাবাস কর্মীদের ইউক্রেন ছেড়ে চলে যেতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সরকারি কর্মকর্তা এপিকে জানিয়েছেন, কয়েকজন কূটনীতিককে নেটো মিত্র পোল্যান্ডের নিকটবর্তী পশ্চিম ইউক্রেনে স্থানান্তরিত করা হতে পারে। এই পদক্ষেপের ফলে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের "কূটনৈতিক উপস্থিতি" বজায় থাকবে।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, "অলিম্পিকের সময়" ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হতে পারে।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে সুলিভান বলেন, "আমরা এখন এরকম একটা পর্যায়ে রয়েছি যখন (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট) ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে যেকোনো সময় আক্রমণ শুরু হতে পারে।"
অনেক বিশ্লেষক বলেছেন যে, ২০ ফেব্রুয়ারি চীনে শীতকালীন অলিম্পিক শেষ হওয়ার আগে রাশিয়ার কোনো আক্রমণ চালানোর সম্ভাবনা নেই।
একটি বড় সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ার পর্যাপ্ত সেনা রয়েছে মন্তব্য করে সুলিভান বলেন, রাশিয়া এক আক্রমণেই রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের "উল্লেখযোগ্য অঞ্চল" দখল করতে পারে।
তিনি ইউক্রেনের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আগামী ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে দূতাবাস ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিমান হামলার মাধ্যমে রাশিয়া আগ্রাসন শুরু করতে পারে, যার পরে দূতাবাস থেকে সরে যাওয়া কঠিন হবে।
"অনেক ঝুঁকি রয়েছে এবং অনতিবিলম্বে দূতাবাস ছেড়ে যাওয়াই বিচক্ষণতার পরিচায়ক হবে", সুলিভান আরও বলেন।
এ ছাড়াও শুক্রবার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে একটি ভিডিও কলে অংশ নিয়েছিলেন।
হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "নেতারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন রোধে সমন্বিত প্রচেষ্টার গুরুত্বের বিষয়ে একমত হয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে সামরিক মহড়া বৃদ্ধি করলে রাশিয়াকে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে এবং দেশটির ওপর গুরুতর অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।" বাইডেন ছাড়াও, এই আহ্বানে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, ব্রিটেন, নেটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের নেতারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন যে, বাইডেন ইতিমধ্যেই সেখানে ১ হাজার ৭০০ জনের পাশাপাশি পোল্যান্ডে অতিরিক্ত ৩ হাজার সেনা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পেন্টাগন বলেছে যে, নেটো মিত্রদের আশ্বস্ত করতে এবং নেটোর পূর্ব দিকের সীমান্তে সম্ভাব্য আগ্রাসন ঠেকাতে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে।
পেন্টাগনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার নেটো দেশগুলোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র "যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং প্রতিরক্ষা দিতে আমাদের নেটো মিত্রদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ"।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন শুক্রবার ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবার সঙ্গে ফোনআলাপে, "ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থন পুনর্নিশ্চিত করেন।"
স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ব্লিংকেন "রাশিয়ার দ্বারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের দ্রুত, গুরুতর এবং ঐক্যবদ্ধ জবাব দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন”।
এর আগে শুক্রবার, ব্লিংকেন ইউক্রেনে "যেকোনো সময়" সম্ভাব্য রুশ হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অবিলম্বে পূর্ব ইওরোপীয় দেশটি ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
অস্ট্রেলিয়ায় কোয়াড দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ভারতের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এই মন্তব্য করেছেন।
বৃহস্পতিবার বাইডেন বলেন, "আমরা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সেনাবাহিনীর সঙ্গে মোকাবিলা করছি। এটি একেবারে ভিন্ন একটি পরিস্থিতি এবং জিনিসগুলো দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।"
এ সময় তিনি আরও বলেন, “রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে তিনি আমেরিকানদের উদ্ধার করতে হলেও সেনা পাঠাবেন না”।
"এটি হবে একটি বিশ্বযুদ্ধ। যখন আমেরিকান এবং রাশিয়ানরা একে অপরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়বে, তখন একটি ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হবে,” তিনি বলেছিলেন।
রাশিয়ান কর্মকর্তারা ইউক্রেন আক্রমণ করার পরিকল্পনা অস্বীকার করেছেন, তবে পশ্চিমা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার ক্ষেত্রে একটি অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। কারণ রাশিয়ার দাবি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা নেটোতে সদস্য হওয়ার জন্য ইউক্রেনের আবেদনকে প্রত্যাখ্যান করবে।
পশ্চিমা দেশগুলো এই দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও তারা বলেছে, রাশিয়ার নিকটতম পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন এবং সেনা মহড়া নিয়ে মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করতে ইচ্ছুক তারা।
(এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেস এবং রয়টার্স থেকে নেওয়া হয়েছে।)