কক্সবাজারের উখিয়ায় স্থাপিত বিশ্বের বৃহৎ কুতুপালং ক্যাম্পে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একজন নেতাকে (মাঝি)। তার নাম আবুল কালাম (৩৭)। রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে কুতুপালং ক্যাম্পের বি ক্লকে নিজের বসতঘরের সামনে আবুল কালামের ওপর হামলা চালায় কয়েকজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী।
পুলিশ জানায়, সকালে গুরুতর আহত আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে প্রথমে ক্যাম্পের অভ্যন্তরের এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। সকাল ৯টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল কালাম মারা যান। একই হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যায় আবুল কালামের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
কুতুপালং ক্যাম্পের শরণার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এই ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “রোহিঙ্গাদের নেতা (মাঝি) আবুল কালামকে তার নিজের ঘরের বাইরে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হামলার ঘটনায় জড়িত পাওয়া গেছে রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারী নূর মোহাম্মদ, মো. ইব্রাহীম, মো. ফরিদ, মো. জোবায়ের ও মো. জাবের নামের কয়েকজনকে। লাঠি দিয়ে বেদম পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় উখিয়া থানায় হত্যা মামলা করা হয়েছে।”
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্টি “আরাকান স্যালভেশন আর্মি-(আরসা)” সন্ত্রাসীরা। তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া আট লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে (প্রত্যাবাসনের পক্ষে) সোচ্চার ছিলেন মুহিবুল্লাহ। তার হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই একই বছরের ২২ অক্টোবর ভোরে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ময়নারঘোনা ক্যাম্পে আরসা সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে হত্যা করে ছয়জন মাদ্রাসা শিক্ষক-ছাত্রকে। বর্বর হত্যাকান্ডের এই দুই ঘটনায় আইনশৃংখলা বাহিনী ২৩ জনের বেশি আরসা সদস্যসহ অন্তত ৪৫ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপরও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না।